ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির মধ্যে অন্যতম একটি ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ইসলামী ব্যাংক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম শরিয়া ভিত্তিক একটি ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক লোন সুবিধা প্রদান করছে যা গ্রাহকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে । আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আজ মূলত আমরা আপনাকে” ইসলামী ব্যাংক লোন সুবিধা” সম্পর্কে জানার পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংক লোন সম্পর্কিত সকল তথ্য আপনাকে জানাবো যেহেতু আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ইসলামী ব্যাংকের লোন সুবিধা কি
ইসলামী ব্যাংকের লোন সুবিধা হল এমন এক ধরনের লোন সেবা,যার মাধ্যমে এক গ্রাহকেরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করতে পারেন। এই লোনের মাধ্যমে মূলত গ্রাহকেরা তাদের ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক এবং সামাজিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হন। এছাড়া ইসলামী ব্যাংকের লোনের ইন্টারেস্ট রেট অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় বেশ কম ও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে থাকে।
ইসলামী ব্যাংক লোন সুবিধা ২০২৫ (আপডেট তথ্য)
ইসলামী ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের বিভিন্ন ধরনের লোন সুবিধা প্রদান করে থাকে। গ্রাহকেরা ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক এবং সামাজিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে লোন গ্রহণ করতে পারেন। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক যে সকল প্রদান করছে এ সকল লোনের মধ্যে রয়েছে হোম লোন ,কার লোন, ফ্রিল্যান্সিং লোন,ব্যবসায়িক লোন,প্রবাসী লোন, সেলারি লোন ইত্যাদি। নিম্নে ইসলামী ব্যাংক লোন সুবিধা উপস্থাপন করা হয়েছে:
- গ্রাহকেরা তাদের আয় অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থ লোন নিতে পারবেন দীর্ঘ সময়ের জন্য।
- গ্রাহকরা লোনের আবেদন করার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ের লোনের অর্থ পেয়ে যান।
- ইসলামী ব্যাংক থেকে আলাদাভাবে বিভিন্ন খাতের লোন সুবিধা গ্রহণ করা যায়।
- গ্রাহকরা তাদের আয়ের উপর ভিত্তি করে বড় এমাউন্টের টাকা ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন গ্রহন করতে পারবেন। তবে অবশ্যই তার বৈধ আয়ের সোর্স থাকতে হবে।
- লোনের অর্থ পরিশোধ করার জন্য গ্রাহকেরা বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন।
- ইসলামী ব্যাংকের ইন্টারেস্ট রেট প্রতিযোগিতামূলক।
- খাত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস দিয়ে গ্রাহক সহজে দ্রুত সময়ে লোন গ্রহণের সুবিধা পায়।
- সেল্ফিন অ্যাপ এর মাধ্যমে ঘরে বসে লোন পরিষদ করার সুবিধা এবং অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করার সুবিধা পাওয়া যায়
ইসলামী ব্যাংক লোন সুবিধা সম্পর্কে তো জানলেন এবার তবে জেনে নেওয়া যাক ইফতারি ব্যাংক সর্বোচ্চ কত টাকা লোন দেয় এ সম্পর্কে।
ইসলামী ব্যাংক সর্বোচ্চ কত টাকা লোন দেয়
ইসলামী ব্যাংক গ্রাহকদের সর্বনিম্ন ২০-৫০ হাজার ও লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ তাদের লোনের আওতায় ২ কোটি টাকা পর্যন্ত লোন প্রদান করে থাকে। এটি সাধারণত হোম লোন হিসেবে পরিচিত। তবে কোন গ্রাহক যদি ব্যবসায়ী অর্থাৎ কর্পোরেট ব্যবসায়ী বা শিল্পপতি হয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে তিনি তার প্রতিষ্ঠানের আয়ের উপর ভিত্তি করে ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্বরত কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে। আবেদনকারী তার চাহিদা অনুযায়ী করতে পারবেন ইসলামী ব্যাংকের সকল শর্তাবলী অনুসরণ করে।
ইসলামী ব্যাংক লোন সুদের হার
সাধারণত ইসলামী ব্যাংকের লোনের সুদের হার ন্যূনতম ৭/৮ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে লোনের উপর ভিত্তি করে সুদের হার কমবেশি হয়ে থাকে। আপনি যদি ১- ২ বছরের জন্য লোন সুবিধা গ্রহণ করেন সেক্ষেত্রে আপনার ইন্টারেস্ট অনেক কম হয়ে থাকবে। তবে আপনি যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য সুবিধা গ্রহণ করে থাকেন সে ক্ষেত্রে আপনার লোনের সুদের হার বেশি হতে পারে। বর্তমানে সুদের হার জানতে আপনি আপনি আপনার নিকটস্থ ইসলামী ব্যাংকের যেকোন শাখায় গিয়ে যোগাযোগ করুন।
ইসলামী ব্যাংক পাওয়ার যোগ্যতা
ইসলামী ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের লোন পেতে হলে অবশ্যই বেশ কিছু যোগ্যতা গ্রাহকের থাকা আবশ্যক। এ সকল যোগ্যতার মধ্যে রয়েছে:
- অবশ্যই আবেদনকারীর বয়স ন্যূনতম ২১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৬৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। তবে কিছু ক্ষেত্রে বয়সের পরিমাণ কম বেশি হতে পারে।
- আবেদনকারীর অবশ্যই স্থিতিশীল আয় থাকতে হবে যা লোন পরিশোধের সামর্থ্যকের নিশ্চিত করে।
- আবেদনকারীর অবশ্যই একটি স্থায়ী চাকরি বা ব্যবসা বা বৈধ আয়ের উৎস থাকতে হবে।
- আবেদনকারীর ভালো ক্রেডিট ঋণ পরিশোধের ইতিহাস থাকা আবশ্যক।
- আবেদনকারীকে ঋণ খেলাপি হওয়া যাবেনা।
- আবেদনকারী যেখানে বিনিয়োগের জন্য লোন গ্রহণ করতে চাচ্ছেন উক্ত খাতের প্রমাণ এবং আইনের সকল ধরনের কাগজপত্র প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারী তার সম্পত্তি বা আইনগতভাবে বৈধ সম্পদের বিপরীতে যে লোন গ্রহণ করতে চাচ্ছেন অবশ্যই উক্ত সম্পত্তি বা সম্পদের ডকুমেন্টেশন এবং আইনগতভাবে বৈধ হতে হবে।
- কিছু কিছু লোনের ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে ডাউন পেমেন্ট করতে হতে পারে। তবে এটি সব লোনের জন্য আবশ্যক নয় এক্ষেত্রে ব্যাংকে যোগাযোগ করুন।
- আবেদনকারীর লোনের আবেদন এবং ব্যবহৃত অর্থ ইসলামী শরিয়াহ নিয়মের সাথে মিল থাকতে হবে।
ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার পদ্ধতি
কেবলমাত্র ইসলামী ব্যাংক লোন সুবিধা সম্পর্কে জানলে হবে না বরং ইসলামী ব্যাংকের লোন পাওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। এক্ষেত্রে নিম্নে আমরা ধাপ অনুসারে ইসলামী ব্যাংকের লোন পাওয়ার পদ্ধতি সমূহ উপস্থাপন করেছি:
- আপনার নিকটস্থ ইসলামী ব্যাংকের শাখায় গিয়ে লোন সম্পর্কিত তথ্য আলোচনা করুন ও লোনের আবেদন ফরমটি সংগ্রহ করুন লোনের ধারণা অনুযায়ী।
- লোনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন জাতীয় পরিচয় পত্র, আয়ের প্রমাণপত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ইউটিলিটি বিল এবং গ্যারেন্টারের সকল তথ্য প্রদান করুন।
- লোনের জন্য জামানত অথবা সম্পত্তি বা সম্পদ রাখা প্রয়োজন হতে পারে সেক্ষেত্রে জমা রাখুন।
- আপনার আবেদনকৃত ফরমটি সফলভাবে এবং প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস ও জামানত প্রদান করার পর ইসলামী ব্যাংক আপনার আবেদনটি যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন করবে।
- আপনার লোনটি অনুমোদিত হলে আপনার ইসলামী ব্যাংকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ে টাকা আপনি পেয়ে যাবেন।
এবার তাহলে ইসলামী ব্যাংকের লোনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ইসলামী ব্যাংক লোনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার জন্য অবশ্যই বেশ কিছু কাগজপত্র প্রদান করতে হয় যা অবশ্যই বৈধ হতে হবে। নিম্নে এ সকল কাগজপত্র প্রদান করা হয়েছে:
- আবেদনকারী জাতীয় পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারীর সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারী ব্যাংক লেনদেনের সর্বশেষ ৬ মাস কিংবা ১২ মাসের স্টেটমেন্ট।
- ঠিকানা যাচাই করণের জন্য ইউটিলিটি বিল এর ফটোকপি প্রদান করুন (পানি বিল বিদ্যুৎ বিল গ্যাস বিল)।
- গ্যারেন্টারের তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও পাসওয়ার্ড সাইটের রঙিন ছবি প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারী যদি চাকরিজীবী হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আয়ের প্রমাণপত্র প্রদান করতে হবে। তবে আবেদনকারী যদি ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে তার ট্রেড লাইসেন্স ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারী যদি ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন তাহলে প্রমাণপত্র প্রদান করতে হবে।
এ সকল কাগজপত্র ছাড়া যদি অন্যান্য কাগজপত্র প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আপনাকে এ বিষয়ে অবগত করবেন।
ইসলামী ব্যাংক লোন সুবিধা বনাম অন্যান্য ব্যাংকে লোন সুবিধা
ইসলামী ব্যাংক পিএলসি বাংলাদেশের একটি শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক। ব্যাংকটি জটিল কাগজপত্র ছাড়াই গ্রাহকদের প্রদান করে থাকে। যার প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজে খুব সহজ শর্তবলী অনুসরণ করে ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করা যায়। তবে বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যাংকেও খুব সহজে লোন গ্রহন করা সম্ভব হলেও অন্যান্য ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের মতো শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে থাকে না। এক্ষেত্রে যারা শরিয়াহভিত্তিক লোন সুবিধা পেতে চান তারা ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করতে পারেন।
আরও জানতে পারেনঃ সেবা এনজিও লোন
শেষ কথা
প্রত্যাশা করি আজ আমরা আপনাকে ইসলামী ব্যাংক লোন সুবিধা সম্পর্কে জানার পাশাপাশি “ইসলামী ব্যাংক লোন সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে পেরেছি। আপনি যদি শরিয়াহ ভিত্তিক লোন সুবিধা পেতে চান সে ক্ষেত্রে আপনি ইসলামী ব্যাংকে গিয়ে আলোচনা করতে পারেন। আর্টিকেলটি সম্পর্কে কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে আপনি আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।