নিজের পরিবারের জন্য একটি স্বপ্নের বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনা অনেকের জীবনের অন্যতম লক্ষ্য হয়ে থাকে । বিভিন্ন্ন ব্যাংকের বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানেট হোম লোন এই স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হোম লোন প্রদান করে, যা বাড়ি ক্রয়, নির্মাণ বা সংস্কারে সহায়তা করে। এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব কোন কোন ব্যাংক হোম লোন দেয়, তাদের সুদের হার এবং হোম লোনের সুবিধা।
হোম লোন প্রদানকারী ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশে প্রায় সকল সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক এবং কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান হোম লোন প্রদান করে। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেওয়া হলো:
- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ: শরিয়াহভিত্তিক হোম লোন প্রদান করে থাকে। লোনেরঅর্থ ফ্ল্যাট ক্রয় ও বাড়ি নির্মাণে ব্যবহার করতে হয়।
- যমুনা ব্যাংক: আকর্ষণীয় সুদের হারে হোম লোন সুবিধা দেয় যমুনা ব্যাংক।
- অগ্রণী ব্যাংক: সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ হোম লোন প্রদান করে থাকে
- আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক: শরিয়াহভিত্তিক হোম লোনের বাড়িতে বিনিয়োগ সুবিধা।
- সিটি ব্যাংক: দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ ও নমনীয় শর্তে হোম লোন প্রদান করে (সুদের হার: ১১.৫০%)।
- এবি ব্যাংক: সম্পত্তির মূল্যের ৭০% পর্যন্ত ঋণ দেয় (সুদের হার: ১২.৫০%)।
- বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (BHBFC): সাশ্রয়ী সুদের হারে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদান করে।
- ডাচ-বাংলা ব্যাংক: আকর্ষণীয় হারে হোম লোন প্রদান করে থাকে ( ধারনাকৃত সুদের হার: ৯.০০%)।
- ঢাকা ব্যাংক: ফ্ল্যাট ক্রয় ও সংস্কারের জন্য লোন প্রদান করে থাকে। ( ধারনাকৃত সুদের হার: ১০.৫০%)।
- মিডল্যান্ড ব্যাংক: সহজ শর্তে লোন প্রদান করে থাকে। ( ধারনাকৃত সুদের হার: ১১.৫০%)।
- উত্তরা ব্যাংক: দীর্ঘমেয়াদী হোম লোন প্রদান করে থাকে। (ধারনাকৃত সুদের হার: ১২.০০%)।
- ট্রাস্ট ব্যাংক: সাশ্রয়ী হারে ঋণ প্রদান করে থাকে (ধারনাকৃত সুদের হার: ৯.০০%)।
- ব্র্যাক ব্যাংক: দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ ও গ্রাহকদলর সুবিধা বিবেবচনার লোন প্রদান করে থাকে।(ধারনাকৃত সুদের হার: ৯.৫০%)।
- স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক: প্রিমিয়াম সেবা আকারে লোন প্রদান করে থাকে।( ধারনাকৃত সুদের হার: ৯.৫০%)।
উপরের তালিকায় উল্লিখিত ব্যাংক ছাড়াও আরও অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান হোম লোন প্রদান করে।
ব্যাংকগুলোর সুদের হার
হোম লোনের সুদের হার ব্যাংকভেদে ভিন্ন হয়। নিম্নে কিছু ব্যাংকের সুদের হারের তালিকা দেওয়া হলো:
বিশেষ দ্রষ্টব্য: যে কোন সময়ে সুদের হার পরিবর্তন হতে পারে। নিম্নে উপস্থাপিত সুদের হার ধারনাকৃত।
- এনসিসি ব্যাংক: ৮.৯৯%
- ডাচ-বাংলা ব্যাংক: ৯.০০%
- ট্রাস্ট ব্যাংক: ৯.০০%
- ব্র্যাক ব্যাংক: ৯.৫০%
- স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক: ৯.৫০%
- ঢাকা ব্যাংক: ১০.৫০%
- ইস্টার্ন ব্যাংক: ১০.৫০%
- সিটি ব্যাংক: ১১.৫০%
- মিডল্যান্ড ব্যাংক: ১১.৫০%
- প্রাইম ব্যাংক: ১১.৫০%
- উত্তরা ব্যাংক: ১২.০০%
- এবি ব্যাংক: ১২.৫০%
- মার্চেন্টাইল ব্যাংক: ১৩.০০%
- পদ্মা ব্যাংক: ১৫.০০%
সুদের হার সময়ের সাথে পরিবর্তন হতে পারে, তাই আবেদনের আগে ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
কোন কোন ব্যাংক হোম লোন দেয়: সুদের হার তুলনা করে সঠিক ব্যাংক নির্বাচন করুন।
হোম লোনের সুবিধা
হোম লোন গ্রহণের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
- ১. কম সুদের হার: হোম লোনের সুদের হার পার্সোনাল লোন বা ক্রেডিট কার্ডের তুলনায় অনেক কম। উদাহরণস্বরূপ, এনসিসি ব্যাংকের হোম লোনের সুদের হার মাত্র ৮.৯৯%, যা অন্যান্য ঋণের তুলনায় সাশ্রয়ী।
- ২. সহজ কিস্তি পরিশোধ: হোম লোন দীর্ঘমেয়াদী (৫-৩০ বছর) হওয়ায় মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করা সহজ। এটি আর্থিক চাপ কমায়।
- ৩. বহুমুখী ব্যবহার: হোম লোন শুধু বাড়ি ক্রয় বা নির্মাণের জন্য নয়, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করা যায়, যদি ব্যাংকের শর্ত মেনে চলা হয়।
- ৪. কর সুবিধা: হোম লোনের সুদের ওপর সরকার কর ছাড়ের সুবিধা প্রদান করে, যা আর্থিক সাশ্রয় বাড়ায়।
- ৫. দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ: বেসরকারি ব্যাংক যেমন ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ইত্যাদি দ্রুত ঋণ প্রক্রিয়াকরণের সুবিধা দেয়।
কোন কোন ব্যাংক হোম লোন দেয়: উপরের সুবিধাগুলো বিবেচনা করে হোম লোন নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিন।
হোম লোন নেওয়ার শর্ত
হোম লোন পাওয়ার জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়:
- আয়ের প্রমাণ: বেতনভোগীদের বেতন স্লিপ এবং স্ব-নিযুক্তদের মুনাফার প্রমাণ জমা দিতে হয়।
- ক্রেডিট স্কোর: ভালো CIBIL স্কোর থাকলে ঋণ পাওয়া সহজ হয়।
- সম্পত্তির কাগজপত্র: সম্পত্তির মালিকানার স্পষ্ট দলিল প্রয়োজন।
- বয়স: সাধারণত ১৮-৫০ বছরের মধ্যে হতে হয়।
- নাগরিকত্ব: বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে বা প্রবাসীদের জন্য বিশেষ সুবিধা থাকতে হবে।
- কীভাবে হোম লোনের জন্য আবেদন করবেন?
- হোম লোন পাওয়ার জন্য নিকটস্থ ব্যাংক শাখায় যোগাযোগ করুন বা তাদের ওয়েবসাইটে অনলাইন আবেদন ফর্ম পূরণ করুন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (আয়ের প্রমাণ, সম্পত্তির দলিল, পরিচয়পত্র) জমা দিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে সরাসরি আলোচনা করা নিরাপদ।
- কোন কোন ব্যাংক হোম লোন দেয়: ব্যাংকের শর্ত ও সুদের হার তুলনা করে সঠিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করুন।
শেষ কথা
হোম লোন স্বপ্নের বাড়ি কেনার পথকে সহজ করে। বাংলাদেশে এনসিসি ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংকের মতো ব্যাংকগুলো সাশ্রয়ী সুদের হারে হোম লোন প্রদান করে। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সুদের হার, পরিশোধের মেয়াদ এবং ব্যাংকের শর্তাবলী ভালোভাবে যাচাই করা উচিত। কোন কোন ব্যাংক হোম লোন দেয় তা জানার পর আপনার আর্থিক সক্ষমতা ও প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ব্যাংক নির্বাচন করুন। এটি আপনার স্বপ্নের বাড়ির পথকে আরও সহজ করবে।