গ্রামীণ ব্যাংক স্টুডেন্ট লোন সম্পর্কে জানেন কী? গ্রামীণ ব্যাংক স্টুডেন্ট লোন হিসেবে একজন শিক্ষার্থী নূন্যতম ৩৮ হাজার টাকা হতে সর্বাধিক ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা নিতে পারবেন। তবে লোনের প্রকারভেদে ও শিক্ষার্থীর চাহিদা অনুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংক স্টুডেন্ট লোনের অর্থের পার্থক্য বিদ্যমান। শিক্ষার্থীরা নূন্যতম ২ বছর হতে সর্বোচ্চ ৫ বছরের মধ্যে লোন পরিশোধ করার ও গ্রহণ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে, আজ আমরা আপনাকে, গ্রামীণ ব্যাংক স্টুডেন্ট লোন সম্পর্কিত সকল তথ্য জানাবো।
গ্রামীণ ব্যাংক স্টুডেন্ট লোন কি
গ্রামীণ ব্যাংকের স্টুডেন্ট লোন হলো এমন একটি লোন যা শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার জন্য প্রদান করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের মেডিকেল, প্রকৌশল এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের কোর্সের মেয়াদ ও চাহিদা অনুযায়ী ন্যূনতম ৩৮ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা প্রদান করে থাকে গ্রামীণ ব্যাংক। শিক্ষার জন্য অর্থ বিনিয়োগের বিশেষ লোন সুবিধাকে গ্রামীণ ব্যাংক স্টুডেন্ট লোন বা গ্রামীণ ব্যাংক শিক্ষা লোন বলা হয়।
গ্রামীণ ব্যাংক হতে যারা স্টুডেন্ট লোন নিতে পারবেন
গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের অন্যতম একটি ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থা। গ্রামীণ ব্যাংক মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য অর্থাৎ মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার, স্নাতক বিভিন্ন বিষয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার জন্য গ্রামীণ ব্যাংক হতে লোন গ্রহণ করতে পারবেন। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ফোন করার জন্য অবশ্যই শিক্ষার্থীর পিতা-মাতাকে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য হতে হবে।
আরো জানুন >>>>>> স্টুডেন্ট লোন ইসলামী ব্যাংক <<<<<<<<
গ্রামীণ ব্যাংক স্টুডেন্ট লোনের বৈশিষ্ট্য
প্রতিটি ব্যাংকের মতোই গ্রামীণ ব্যাংকের স্টুডেন্ট লোন বেশ জনপ্রিয় তার বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে। এ সকল বৈশিষ্ট্য মধ্যে রয়েছে:
- অবশ্যই শিক্ষার ক্ষেত্রে অর্থ বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে লোন নিতে হবে।
- শিক্ষার্থী তার অধ্যায়নরত শিক্ষাজীবনে ঋণ পরিশোধ না করার সুবিধা পেয়ে থাকেন অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের ছাত্র অবস্থায় ঋণ পরিশোধ করতে হয় না। শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার কিছুদিন (৩ মাস হতে ১২ মাস) পর হতে মাসিক স্বল্প সুদসহ অর্থ পরিশোধ করতে হয়।
- শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক তার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত টিউশন ফি মওকুফ সুবিধা পেয়ে থাকেন।
- শিক্ষার জীবনে অর্থ পরিশোধ করার জন্য বাড়তি কোন চাপ থাকে না।
গ্রামীণ ব্যাংক স্টুডেন্ট লোন/ শিক্ষা ঋণ এর শর্তাবলি
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শিক্ষা ঋণ বা স্টুডেন্ট লোন নিতে হলে অবশ্যই গ্রামীণ ব্যাংকের বেশ কিছু শর্তাবলী অনুসরণ করতে হবে। ১৯৯৭ সালের গ্রামীণ ব্যাংকের নীতিমালা অনুসারে গ্রামীণ ব্যাংকের যেকোনো সদস্য তাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার তার জন্য গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শিক্ষা লোন গ্রহণ করতে পারেন যা শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবন সুন্দর করে তুলে। এ সকল শর্তাবলির মধ্যে রয়েছে:
- গ্রাহকের সদস্যের বয়স ন্যূনতম ১ বছর হতে হবে লোন গ্রহণ করার জন্য।
- অবশ্যই উক্ত শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিকভুক্ত কলেজে অনার্স ও মাস্টার্সে ভর্তির জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা গ্রামীণ ব্যাংকের লোনের জন্য উপযুক্ত।
- গ্রামীণ ব্যাংকের শিক্ষা লোনে যে সকল আখরোছা আওতাভুক্ত থাকবে তার মধ্যে রয়েছে; টিউশন ফি,মেসের খরচ /হোস্টেল খরচ, ভর্তি ফি।
- ঋণগ্রহীতার পরিবারের এক বা একাধিক সন্তান ঋণ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।
- শিক্ষার্থীর অধ্যয়নকালে অর্থ পরিশোধ করতে হবে না।
- শিক্ষার্থীর শিক্ষা সমাপ্ত হওয়ার এক বছর পর থেকে মাসিক কিস্তি আকারে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
- অবশ্যই প্রতিবছর শতাংশ পরিষেবা চার্জ শেষ কিস্তি বিতরণের পরের মাস থেকে প্রযোজ্য হবে।
গ্রামীণ ব্যাংক স্টুডেন্ট লোনের নথিপত্র
গ্রামীণ ব্যাংক হতে স্টুডেন্ট লোন গ্রহণ করার জন্য বেশ কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। এসকল নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে:
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
- সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
- ডাক টিকিট স্ট্যাম্প (১০ টাকা সম মূল্যের / অধিক মূল্যের)।
- শিক্ষার্থীর অধ্যয়নের প্রমাণপত্র।
এছাড়া আরো যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন হবে, তা গ্রামীণ ব্যাংকের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আপনাকে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাবেন।
আরো জানুন >>>>>> ব্র্যাক ব্যাংক স্টুডেন্ট লোন (আপডেট তথ্য) <<<<<<<<
গ্রামীণ ব্যাংক স্টুডেন্ট লোন কত টাকা
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শিক্ষা ঋণ হিসেবে একজন শিক্ষার্থী তার প্রয়োজন অনুসারে ন্যূনতম ৩৮ হাজার টাকা থেকে সর্বাধিক এক লক্ষ পাঁচ হাজার টাকা লোন পেয়ে থাকেন। নিম্নে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে:
- এনবিএ/এমএস/এমএ দুই বছর মেয়াদী কোর্সের জন্য শিক্ষার্থীরা সর্বাধিক ৩৮ হাজার টাকা লোন পেয়ে থাকেন।
- স্নাতক (অনার্সে) অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা আর সর্বোচ্চ ৭৭ হাজার টাকা লোন পেয়ে থাকেন।
- ৪ বছর মেয়াদী ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের জন্য শিক্ষার্থীরা তাদের মেটাবার জন্য ৭৫ হাজার টাকা লোন পেয়ে থাকেন।
- পাঁচ বছর মেয়াদি এমবিবিএস কোর্সে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষার জন্য এক লক্ষ পাঁচ হাজার টাকা লোন সুবিধা পেয়ে থাকেন।
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে স্টুডেন্ট লোন নেওয়ার উপায়
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে স্টুডেন্ট লোন নেওয়ার জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের নিকটস্থ শাখায় গিয়ে বা আপনার নিকটস্থ গ্রামীণ ব্যাংকের এর সভা অফিসে গিয়ে লোন অফিসারের সাথে যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রদান করে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোন সুবিধা পাওয়া যায়।
গ্রামীণ ব্যাংক স্টুডেন্ট ঋণ সম্পর্কিত বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন সমূহ
গ্রামীণ ব্যাংকের স্টুডেন্ট লোনের সুদের হার কত ?
গ্রামীণ ব্যাংকের স্টুডেন্ট লোনের সুদের হার ৫ শতাংশ। তবে এটি গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাংক নীতিমালা অনুযায়ী পরিবর্তনশীল।
ডিপ্লোমা ও নার্সিং পড়ার ক্ষেত্রে কি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে স্টুডেন্ট লোন গ্রহণ করা যায় ?
হ্যাঁ অবশ্যই, ডিপ্লোমা ও নার্সিং এর শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষার ব্যয় মেটানোর জন্য গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন
গ্রামীণ ব্যাংক স্টুডেন্ট লোন কত টাকা পায় ?
এনবিএ/এমএস/এমএ দুই বছর মেয়াদী কোর্সের জন্য শিক্ষার্থীরা সর্বাধিক ৩৮ হাজার টাকা লোন পেয়ে থাকেন।
স্নাতক (অনার্সে) অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা আর সর্বোচ্চ ৭৭ হাজার টাকা লোন পেয়ে থাকেন।
৪ বছর মেয়াদী ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের জন্য শিক্ষার্থীরা তাদের মেটাবার জন্য ৭৫ হাজার টাকা লোন পেয়ে থাকেন।
পাঁচ বছর মেয়াদি এমবিবিএস কোর্সে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষার জন্য এক লক্ষ পাঁচ হাজার টাকা লোন সুবিধা পেয়ে থাকেন।
সারকথা
গ্রামীণ ব্যাংক শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য তাদের পাশে রয়েছে চিরন্তর। এক্ষেত্রে প্রতি অভিভাবকের দায়িত্ব তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করা ও প্রয়োজনে গ্রামীণ ব্যাংকের উচ্চশিক্ষার লোন গ্রহণ করা। বাংলাদেশে সবচেয়ে কম সুদে ও শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন শেষ হওয়ার এক বছর পর থেকে মাসিক ঋণ পরিশোধ সুবিধা রয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকে।