গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন সম্পর্কে জানেন কি? এখন কেবলমাত্র শহরে নয় বরঞ্চ গ্রামে বাড়ি তৈরি করার জন্য বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি সকল ব্যাংক হোম লোন প্রদান করছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাংক গ্রাহকের অবস্থান গ্রামে; তবে এ সকল গ্রাহকের মধ্যে কেউ রয়েছেন ব্যবসায়ী, আবার কেউবা চাকরিজীবী, আবার কেউ কেউ রয়েছেন পেশাদার কর্মে নিযুক্ত। শহরে বসবাসরত ব্যাংকের গ্রাহকেরা বাড়ি তৈরি করার জন্য হোম লোন যা বাংলা পরিভাষায় গৃহঋণ পেয়ে থাকেন। তবে চিন্তা নেই এখন কেবলমাত্র শহর নয় এবার গ্রামেও বাংলাদেশের সকল ব্যাংক হোম লোন প্রদান করছে। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে জানাবো “গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন” সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন কি?
সহজ ভাষায় যদি বলা হয়, গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোনটির ব্যাংকিং নাম হোম লোন যা গ্রাহকদের বাড়ি তৈরি করার জন্য প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের সরকারি বেসরকারি ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি গ্রামে বাড়ি তৈরি করার জন্য হোম লোন প্রদান করে থাকে। তবে হোম লোন পাওয়ার জন্য গ্রামে বসবাসকারী গ্রাহকদের বেশ কিছু শর্তাবলী অনুসরণ করতে হয়।
গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন নেওয়ার যোগ্যতা
গ্রামে বাড়ি তৈরি করার জন্য ব্যাংক লোন নেওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্তাবলী বাংলাদেশের সকল ব্যাংকের । যখন এ সকল শর্তাবলী একজন গ্রাহক অনুসরণ করে লোনের জন্য আবেদন করেন গ্রামের বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন নেওয়ার উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হন। গ্রাহকদের যে সকল শর্তাবলী অনুসরণ করতে হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে:
- লোন আবেদনকারীর অবশ্যই মাসিক নির্ধারিত আয় থাকতে হবে।
- আবেদনকারী অবশ্যই বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নির্ভুলভাবে সাথে প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারীর বয়স সর্বনিম্ন ২১ বছর কিংবা ২৫ বছরের মধ্যে ও সর্বাধিক বয়সের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স ৬৫ বছর হতে হবে তবে কিছু কিছু ব্যাংক বিশেষ ক্ষেত্রে ৭০ বছর পর্যন্ত কিছু ব্যাংক গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।
- ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী গ্রাহকের প্রতি মাসে ব্যাংক নীতিমালা অনুযায়ী ন্যূনতম আয় থাকতে হবে। বাংলাদেশের কিছু কিছু ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান মাত্র ২০ হাজার টাকা মাসিক আয়প গ্রাহকদের হোম লোন প্রদান করছে।
- অবশ্যই নিজস্ব জমি ও স্থায়ী সম্পদ থাকতে হবে।
যে সকল ব্যাংক গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন প্রদান করে
বর্তমানে বাংলাদেশ অবস্থানরত আজ সকল ব্যাংক রয়েছে প্রায় সকল ব্যাংক গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন প্রদান করে থাকে। তবে কেবলমাত্র বাংলাদেশের সরকারি বেসরকারি ব্যাংক নয় বরং নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ গ্রামে বাড়ি তৈরি করার জন্য হোম লোন প্রদান করছে। তবে বাংলাদেশ হোম লোন প্রদান করার জন্য যে সকল ব্যাংক সর্বাধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এ সকল ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে: ব্র্যাক ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, এবি ব্যাংক,সিটি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক ইত্যাদি। তবে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে রয়েছে আইডিএলসি। তবে আপনি যদি চান আমাদের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত হোম লোন সম্পর্কিত তথ্য জেনে নিতে পারেন:
যেভাবে গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন পাবেন
গ্রামে বাড়ি তৈরি করার জন্য প্রাথমিকভাবে আপনাকে আপনার যে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে উক্ত ব্যাংকে গিয়ে বাড়ি তৈরি করার জন্য হোম লোন সম্পর্কে আলোচনা করুন কিংবা আপনি যে ব্যাংক থেকে হোম লোন নিতে চাচ্ছেন উক্ত ব্যাংকের আপনার নিকটস্থ শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তার সাথে বিস্তারিত আলোচনা করুন। এক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তা আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে জানাবেন।
গ্রামে বাড়ি করার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপএ
গ্রামে বাড়ি করার জন্য বেশ কিছু নথিপত্র অবশ্যই আবেদনকারীকে ব্যাংকে জমা দিতে হবে। এ সকল নথিপত্র ব্যাংক কর্মকর্তা বিস্তারিত পর্যালোচনা করে আবেদনকারীর লোনটি অনুমোদন করবেন। এ সকল প্রয়োজনীয় নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে:
- লোন আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের স্পষ্ট ফটোকপি অবশ্যই সত্যায়িত হতে হবে।
- লোন আবেদনকারীর সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি। তবে প্রয়োজন সাপেক্ষে অতিরিক্ত ছবি সঙ্গে রাখতে হবে।
- আব্দুল কাদের যদি পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই সত্যায়িত কপি ব্যাংকে প্রদান করতে হবে।
- অবশ্যই জামিনদাতা (গ্যারেন্টারের) প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে গ্যারান্টারের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও এক কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি প্রদান করতে হবে। যদি জামিনদাতার পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই স্পষ্ট ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারী কিংবা গ্যারেন্টারের অফিস আইডি কার্ড কিংবা ভিজিটিং কার্ড থাকে তাহলে স্পষ্ট ফটোকপি অবশ্যই প্রদান করতে হবে।
- ঠিকানা ভেরিফিকেশনের জন্য ইউটিলিটি ফটোকপি প্রদান করতে হবে। যেমন: পানি বিল, গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল এর স্পষ্ট ফটোকপি।
- আবেদনকারী সর্বশেষ প্রধানকৃত ই-রিটার্নের ফটোকপি বা ট্যাক্স সার্টিফিকেটের ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারী যদি চাকরিজীবী হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে চাকরির প্রমাণপত্র প্রদান করতে হবে ও আবেদনকারী যদি ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করতে হবে।
- বিগত ৬ মাসের কিংবা 12 মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্টের কপি প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারী যদি ক্রেডিট কার্ডের মালিক হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডের বিস্তারিত তথ্য প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারীর যদি পূর্বে কোন লোন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারীর পেশাগত দক্ষতা ভেবে ভিন্ন ভিন্ন ডকুমেন্ট প্রদান করতে হবে। যেমন: ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স ও অন্যান্য ডকুমেন্ট, চাকরিজীবীদের জন্য স্যালারি সার্টিফিকেট ও অন্যান্য ডকুমেন্ট।
- জমির বিস্তারিত তথ্য প্রদান করতে হবে। যেমন: জমির দলিল ইত্যাদি।
এ সকল নথিপত্র ছাড়া যদি অন্য কোন কাগজপত্র প্রয়োজন হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি যে ব্যাংক থেকে লোন নিতে চাচ্ছেন উক্ত ব্যাংকের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা আপনাকে এ বিষয়ে অবগত করবেন।
গ্রামে বাড়ি তৈরি করার জন্য ব্যাংক লোনের সুদের হার
গ্রামে বাড়ি তৈরি করার জন্য ব্যাংক লোনের সুদের হার সাধারণত ব্যাংকের ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত ৮ শতাংশ থেকে সর্বাধিক ১৪ শতাংশ পর্যন্ত সুদের হার হয়ে থাকে। তবে সুদের হার মোট অর্থ ও লোন পরিশোধ করার সময়ের উপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে আপনি যে ব্যাংক থেকে হোম লোন নিতে চাচ্ছেন উক্ত ব্যাংকের সুদের হার অবশ্যই জেনে নিবেন।
সারকথা
গ্রামে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন থাকে তাদের একটি সুন্দর বাড়ি হোক। তবে এই গ্রামে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষের সাধ থাকলেও সাধ্য থাকে না তা পূর্ণ করার, তবে চিন্তা নেই বর্তমানে বাংলাদেশের সকল ব্যাংক গ্রাহকদের গ্রামে বাড়ি তৈরি করার জন্য প্রদান করছে হোম লোন। তবে ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই সকল নথিপত্র ও শর্তাবলী মনোযোগ সহকারে একবার পড়ে নিবেন। প্রত্যাশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে “গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন” সম্পর্কিত সকল তথ্য বিস্তারিত আকারে জানাতে পেরেছি। আপনারা আবেদনকৃত লোনটি দ্রুত অনুমোদিত হোক এই প্রত্যাশাই করি।