পূবালী ব্যাংক গাড়ি লোন বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি লোন। পূবালী ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের স্বপ্ন পূরণে বিগত কয়েক বছর ধরে গাড়ির লোন প্রদান করে চলেছে। গ্রাহক চাকরিজীবী হোক কিংবা ব্যবসায়ী গাড়ি ক্রয় করার ইচ্ছা সকলের থাকে আর এই স্বপ্ন পূরণের পথে সাথী হতে পূবালী ব্যাংক রয়েছে তাদের গ্রাহকের পাশে। একজন গ্রাহক পূবালী ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ৪০ লক্ষ টাকা গাড়ি ক্রয় করার জন্য গাড়ির লোন নিতে পারেন। তবে গাড়ির মোট মূল্যের ৫০% পর্যন্ত পূবালী ব্যাংক প্রদান করে থাকে। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে” পূবালী ব্যাংক গাড়ি লোন” সম্পর্কিত সকল তথ্য জানাবো। সেহেতু এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পূবালী ব্যাংক গাড়ি লোন নিতে পারবেন যারা
পূবালী ব্যাংক সকল গ্রাহককে গাড়ির লোন প্রদান করে থাকে না। পূবালী ব্যাংকের গাড়ি লোনের জন্য যারা উপযুক্ত কেবল তারাই পূবালী ব্যাংক থেকে গাড়ির লোন নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্তাবলী রয়েছে:
- আবেদনকারী গ্রাহকের অবশ্যই মোট মাসিক আয় থাকতে হবে যা মোট গাড়ি লোনের কিস্তির তিন গুন। যেমন: কিস্তি ১০ হাজার হলে মাসিক আয় নূন্যতম ৩০,০০০ টাকা।
- আবেদনকারী গ্রাহক যদি বেতনভোগী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই চাকরির নিশ্চয়তা প্রমাণের জন্য উক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের নিকট হতে একটি কভার লেটার বা প্রশংসাপত্র সংগ্রহ করতে হবে ও ব্যাক করতে নির্ধারিত সময়ের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
- আবেদনকারী গ্রাহক যদি ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন; সেক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের ব্যবসার অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র প্রদান করতে হবে।
এছাড়া পূবালী ব্যাংকের গাড়ি লোন গ্রহণের জন্য ন্যূনতম ২১ বছর বয়সী যেকোনো গ্রাহক যিনি বাংলাদেশ রয়েছেন ও সন্তোষজনক ভাবে গাড়ি লোনের মোট অর্থ পরিশোধের উপায় ও ক্ষমতা রয়েছে কেমন ব্যক্তি পূবালী ব্যাংক থেকে গাড়ির লোন গ্রহণ করতে পারবেন। এবার তবে জেনে নেওয়া যাক পূবালী ব্যাংক গাড়ি লোন এর প্রয়োজনীয় নথিপত্র সম্পর্কে।
আরো জানুন >>>>>>ইসলামী ব্যাংক কার লোন বা গাড়ি ঋণ যেভাবে নিবেন ২০২৫<<<<<<<<
পূবালী ব্যাংক গাড়ি লোন এর নথিপত্র
পূবালী ব্যাংকে গাড়ির লোনের জন্য আবেদন করতে বেশ কিছু নথিপত্র/কাগজপত্র/ডকুমেন্টসের প্রয়োজন হয়। এসকল নথিপত্রের মধ্যে প্রয়োজনীয় নথিপত্র হচ্ছে:
- আবেদনকারী ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও পাসপোর্ট সাইজের সদ্য তোলা রঙিন ২ ছবি। ( ছবি সংখ্যা বেশি প্রয়োজন হতে পারে সাথে রাখুন)
- আবেদনকারীর গ্যারেন্টার বা জামিনদাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি ও সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ১ কপি ছবি।
- আবেদনকারী গ্রাহকের সর্বশেষ প্রধানকৃত আয়কর রশিদ /রিটার্ন /আয়কর ছাড়পত্র /আয়কর রশিদ এর ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
- টিন সার্টিফিকেটের স্পষ্ট ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
- ইউটিলিটি বিল এর সদ্য কপি ঠিকানা ভেরিফিকেশন এর জন্য প্রদান করতে হবে (বিদ্যুৎ বিল /পানি বিল /গ্যাস বিল)।
- আবেদনকারীর কমপক্ষে ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রয়োজন হবে। তবে সাধারণত ১২ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রয়োজন হয়ে থাকে।
- গ্যারেন্টারের ব্যাংকিং তথ্য।
- জামিন দাতার যদি অফিস আইডি কার্ড বা ভিজিটিং কার্ড থাকে তাহলে অবশ্যই প্রদান করতে হবে।
- যে সকল আবেদনকারী গ্রাহকরা বেতনভোগী অর্থাৎ সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন তাদের অবশ্যই ও তাদের কর্তৃপক্ষের নিকট হতে কভার লেটার ও পে স্লিপ এবং বেতন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে ব্যাংকে প্রদান করতে হবে।
- যারা ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা তাদের অবশ্যই বৈধ ব্যবসার লাইসেন্স থাকতে হবে এবং আয়ের বিবরণী প্রদান করতে হবে।
- গাড়ির ডিলারশিপ এ যানবাহনের উদ্ধৃতি আবেদনকারী দ্বারা যথাযথভাবে গৃহীত।
এছাড়া আরো কোন কাগজপত্রের প্রয়োজন হলে এক্ষেত্রে পূবালী ব্যাংকের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আপনাকে এ বিষয়ে বিস্তারিত অবহিত করবেন।
পূবালী ব্যাংক গাড়ি লোন এর বৈশিষ্ট্য
বাংলাদেশের অন্য সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতোই পূবালী ব্যাংকে বেশি জনপ্রিয় একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক।

গাড়ির লোনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পাশাপাশি রূপালী ব্যাংকে গাড়ি লোন এর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার ফলে পূবালী ব্যাংকের গাড়ি লোন ব্যাপক ভাবে জনপ্রিয়। এ সকল বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে:
- মোট গাড়ির মূল্যের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পর্যন্ত লোন সুবিধা (বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে এটি পরবর্তীতে পরিবর্তন হতে পারে)।
- গাড়ি ক্রয় করার জন্য সর্বোচ্চ লোনের পরিমাণ ৪০ লক্ষ টাকা।
- লোন পরিশোধ করার জন্য গ্রাহক ন্যূনতম ১২ মাস থেকে সর্বাধিক ৬০ মাস সময় পেয়ে থাকেন।
- গাড়ি লোনের অর্থ মাসিক কিস্তি আকারে পরিশোধ যোগ্য।
- প্রতিযোগিতামূলক সুদের হার।
আরো জানুন >>>>>> কার লোন বা লোনে গাড়ি কেনার নিয়ম (আপডেট তথ্য ২০২৫) <<<<<<<<
পূবালী ব্যাংক গাড়ি লোন এর শর্তাবলি
পূবালী ব্যাংক হতে গাড়ি লোন নিতে হলে বেশ কিছু শর্তাবলী অবশ্যই মানতে হবে নতুবা উক্ত ব্যক্তি রূপালী ব্যাংক হতে গাড়ি লোন পাবেন না। যে সকল শর্তাবলীর মধ্যে রয়েছে:
- অবশ্যই গাড়ি লোনের অর্থ দিয়ে নতুন গাড়ি ক্রয় কিংবা পুরাতন গাড়ি ক্রয় করতে হবে। যার ৫০% অর্থ পূবালী ব্যাংক বহন করবে।
- আবেদনকারীদের ন্যূনতম বয়স কমপক্ষে ২১ বছর হতে হবে ও ঋণ শেষে সর্বোচ্চ বয়স ৬৫ বছর হতে হবে।
- গাড়ি লোনের কিস্তির তিন গুণ হতে হবে আবেদনকারীর মাসিক আয়।
- আবেদনকারী অবশ্যই বাংলাদেশী নাগরিক ও করদাতা হতে হবে যার ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করার ক্ষমতা ও উপায় রয়েছে।
উপরোক্ত সকল শর্তাবলী গ্রাহক অনুসরণ করলে তিনি পূবালী ব্যাংক গাড়ি লোন এর জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবেন।
সিকিউরিটি ডকুমেন্ট হিসেবে যা অনুরোধ করতে হবে পূবালী ব্যাংক গাড়ি লোনে
একটি ব্যাংক শুধু শুধু কোন সিকিউরিটি ডকুমেন্ট ছাড়া কখনো লোন প্রদান করে না। এক্ষেত্রে পূবালী ব্যাংক এর ব্যতিক্রম নয়। পূবালী ব্যাংক গাড়ী লোন এর জন্য সিকিউরিটি ডকুমেন্ট হিসেবে যা প্রয়োজন হবে তা নিম্নে উপস্থাপন করা হয়েছে :
- অবশ্যই গ্রাহক ও ব্যাংকের নামে গাড়ির নিবন্ধন হবে ( লোন পরিশোধ করার পরবর্তী সময় গ্রাহকের নামে রুপান্তরিত হবে)।
- বন্ধক গাড়ি সম্পর্কে
- ব্যক্তিগত গ্যারান্টি।
- এন চেক ডিপোজিট মেমোরেন্ডাম সহ পোস্ট-ডেটেড সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত বৈধ এমআইসিআর চেক এর প্রয়োজনীয় সংখ্যা ইত্যাদি।
পূবালী ব্যাংক গাড়ি লোন সুদের হার কত ?
বর্তমান সময়ে পূবালী ব্যাংক গাড়ি লোন সুদের হার মাত্র ৯ শতাংশ। তবে ঋণ প্রক্রিয়াকরণ ফি ঋণের পরিমাণ ০.৫০ শতাংশ কিন্তু সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকার বেশি নয়।
আরো জানুন >>>>>>ইসলামী ব্যাংক কার লোন বা গাড়ি ঋণ যেভাবে নিবেন ২০২৫ <<<<<<<<
পূবালী ব্যাংক গাড়ি লোন আবেদন করার প্রক্রিয়া
পূবালী ব্যাংক গাড়ি লোন আবেদন করার প্রক্রিয়া বেশ সহজ। আপনি যদি উপরোক্ত নির্দেশনা অনুযায়ী পূবালী ব্যাংকের গাড়ি লোনের জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হন;সেক্ষেত্রে আপনার নিকটস্থ পূবালী ব্যাংকের শাখায় প্রয়োজনীয় নথিপত্র সহ যোগাযোগ করুন। আপনার গাড়ি লোনের আবেদন ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র দ্রুত পর্যালোচনা করে ব্যাংক কর্মকর্তা গাড়ি লোনের অনুমোদন প্রদান করবেন।
পূবালী ব্যাংক গাড়ি লোন সম্পর্কিত বহুল প্র্রশ্নসমূহ
পূবালী ব্যাংক গাড়ি লোন সুদের হার কত ?
বর্তমান সময়ে পূবালী ব্যাংক গাড়ি লোন সুদের হার মাত্র ৯ শতাংশ
পূবালী ব্যাংক গাড়ি লোনে মোট গাড়ির মূল্যের কত শতাংশ পর্যন্ত পর্যন্ত লোন সুবিধা পাওয়া যাবে ?
গাড়ির মূল্যের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পর্যন্ত লোন সুবিধা পাবে
পূবালী ব্যাংক গাড়ি লোন পরিশোধ করার জন্য গ্রাহক ন্যূনতম কত মাস থেকে সর্বাধিক কত মাস সময় পেয়ে থাকেন ?
লোন পরিশোধ করার জন্য গ্রাহক ন্যূনতম ১২ মাস থেকে সর্বাধিক ৬০ মাস সময় পেয়ে থাকেন।
সার কথা
পূবালী ব্যাংক বাংলাদেশের অন্যতম একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। গ্রাহকদের স্বপ্ন পূরণে তারা রয়েছে সর্বদা গ্রাহকের পাশে। গ্রাহকেরা আর যদি পূবালী ব্যাংকের গাড়ি লোন এর সকল শর্তাবলী পূরণ করে তাহলে পূবালী ব্যাংক তাদের গাড়ি লোন প্রদান করার জন্য সর্বোচ্চভাবে সেবা প্রদান করে থাকে। প্রত্যাশা করি, আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে পূবালী ব্যাংক গাড়ি লোন সম্পর্কিত সকল তথ্য যাতে পেরেছি।