বাংলাদেশের সেরা ৫০ এনজিও সম্প্কে জানতে চান? বাংলাদেশে এনজিও (Non-Governmental Organization) সেক্টর সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দারিদ্র্য বিমোচন থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ক্ষমতায়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা। এনজিওগুলো সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসছে।আপনি যদি ব্যাংক বা এনজিওর গ্রাহক হন এবং এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আমরা বাংলাদেশের সেরা ৫০টি এনজিওর একটি তালিকা তৈরি করেছি। তাহলে দেরি কেন চলুন বাংলাদেশের সেরা ৫০ এনজিও সম্পর্কে জেনেনি।
এনজিও কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
এনজিও বা বেসরকারি সংস্থা হলো এমন এক ধরনের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। যারা সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই সমাজের কল্যাণে কাজ করে। বাংলাদেশে এনজিওগুলো মূলত দারিদ্র্য হ্রাস, শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্যসেবা এবং নারী ও শিশুদের ক্ষমতায়নের মতো বিষয়ে কাজ করে। এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে প্রায় ২,৫০০টি নিবন্ধিত এনজিও রয়েছে। যার মধ্যে ২৪০টি আন্তর্জাতিক সংস্থা রয়েছে।বাংলাদেশে এনজিওর ভূমিকা
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে এনজিওগুলো দেশের পুনর্গঠন ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে, যেখানে সরকারি সেবা পৌঁছানো কঠিন, সেখানে এনজিওগুলো সেতুবন্ধনের কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, ব্র্যাকের মতো প্রতিষ্ঠান মাইক্রোফাইনান্সের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনমান উন্নত করেছে।বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ এনজিও: এক নজরে
নিচে আমরা বাংলাদেশের শীর্ষ ১০টি এনজিওর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরছি, যারা তাদের কার্যক্রমের বিস্তৃতি ও প্রভাবের জন্য বিখ্যাত। এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে তাদের স্বচ্ছতা, প্রভাব এবং সামাজিক অবদানের ভিত্তিতে।১. ব্র্যাক (BRAC)
ব্র্যাক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এনজিওগুলোর একটি। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং মাইক্রোফাইনান্সে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ব্র্যাক বর্তমানে ১২টি দেশে কাজ করছে এবং প্রায় ১১ কোটি মানুষকে সেবা দিচ্ছে।২. গ্রামীণ ব্যাংক
যদিও গ্রামীণ ব্যাংক একটি ব্যাংক হিসেবে পরিচিত, তবে এটি এনজিও হিসেবেও গণ্য হয়। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এটি প্রতিষ্ঠা করেন। মাইক্রোফাইনান্সের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নত করেছে।৩. আশা (ASA)
আশা বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ মাইক্রোফাইনান্স প্রতিষ্ঠান। এটি ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বর্তমানে লক্ষ লক্ষ গ্রাহককে ঋণ ও সঞ্চয় সেবা প্রদান করে। আশার কার্যক্রম স্বচ্ছ এবং দক্ষতার জন্য প্রশংসিত।৪. কারিতাস বাংলাদেশ
১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত কারিতাস বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবায় কাজ করে। এটি বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সেবা প্রদানে সক্রিয়।৫. প্রশিকা
প্রশিকা মানবসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র (Proshika) শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করে। এটি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।৬. জাগো ফাউন্ডেশন
জাগো ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের দরিদ্র শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে কাজ করে। এটি বিশেষ করে ঢাকার বস্তি এলাকায় তাদের কার্যক্রমের জন্য পরিচিত।৭. শক্তি ফাউন্ডেশন
নারী ক্ষমতায়ন ও মাইক্রোফাইনান্সে শক্তি ফাউন্ডেশন অসাধারণ কাজ করছে। এটি নারীদের আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করে।৮. টিএমএসএস
ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (TMSS) শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং মাইক্রোফাইনান্সে কাজ করে। এটি উত্তরাঞ্চলে বিশেষভাবে সক্রিয়।৯. বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন
এই ফাউন্ডেশন ছোট ও মাঝারি এনজিওগুলোকে আর্থিক ও প্রশিক্ষণ সহায়তা প্রদান করে। এটি সম্প্রতি বন্যা কবলিত এলাকায় পুনর্বাসনের জন্য ১.২ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে।১০. রিচ বাংলাদেশ
রিচ (RDRS) উত্তরাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কৃষি উন্নয়নে কাজ করে। এটি বিশেষ করে কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদানে সক্রিয়।বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ এনজিও সম্পর্কে তো জানলেন এবার তবে বাংলাদেশের সেরা ৫০ এনজিও তালিকা সম্পর্কে জানুন।বাংলাদেশের সেরা ৫০ এনজিও তালিকা
বাংলাদেশের সেরা ৫০ এনজিও তালিকা
শীর্ষ ১০ এনজিও ছাড়াও বাংলাদেশে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। নিচে ৪০টি উল্লেখযোগ্য এনজিওর একটি তালিকা দেওয়া হলো (সংক্ষিপ্তভাবে):- বুয়েট ফাউন্ডেশন
- সাজেদা ফাউন্ডেশন
- ডাস্ট ফাউন্ডেশন
- উদ্দীপন
- গ্রামীণ কল্যাণ
- সিসিডিবি
- হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল
- প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ
- সেভ দ্য চিলড্রেন
- ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ
- অক্সফাম বাংলাদেশ
- ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল
- গ্রামীণ শক্তি
- গ্রামীণ টেলিকম
- বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
- এডুকো বাংলাদেশ
- ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশ
- হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল
- ইউনিসেফ বাংলাদেশ
- বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি
- এআইডি ফাউন্ডেশন
- স্টেপ ফরওয়ার্ড
- ভিশন ২০২১
- সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (SEHD)
- বাংলাদেশ ইয়ুথ ফাউন্ডেশন
- অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ
- কেয়ার বাংলাদেশ
- এনআইডিএস
- সোসাইটি ফর সোশ্যাল সার্ভিস (SSS)
- ব্রিড
- গ্রামীণ ফাউন্ডেশন
- পপি
- উত্তরণ
- দিশা
- হিল ফ্লাওয়ার
- আলোকিত বাংলাদেশ
- বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (BELA)
- মুক্তি ফাউন্ডেশন
- সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (CPD)
- বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (BLAST)
এনজিও নির্বাচনের সময় কী কী বিষয় মাথায় রাখবেন?
আপনি যদি কোনো এনজিওর সঙ্গে কাজ করতে চান বা তাদের সেবা গ্রহণ করতে চান, তাহলে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করুন:- স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: একটি ভালো এনজিও তাদের আর্থিক কার্যক্রম এবং প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে স্বচ্ছ থাকে। এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি তাদের নিবন্ধন যাচাই করতে পারেন।
- প্রভাব ও ফলাফল: এনজিওটি কতটা প্রভাব ফেলছে তা দেখুন। উদাহরণস্বরূপ, ব্র্যাকের মাইক্রোফাইনান্স প্রোগ্রাম লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে।
- কার্যক্রমের বিস্তৃতি: কিছু এনজিও নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে (যেমন: শিক্ষা) কাজ করে, আবার কিছু বিস্তৃত ক্ষেত্রে কাজ করে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী এনজিও বাছাই করুন।
- স্থানীয় প্রভাব: আপনার এলাকায় এনজিওটির কার্যক্রম কতটা সক্রিয় তা দেখুন। উদাহরণস্বরূপ, রিচ বাংলাদেশ উত্তরাঞ্চলে বেশি সক্রিয়।
FAQ: বাংলাদেশের এনজিও সম্পর্কে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
বাংলাদেশে কতগুলো এনজিও রয়েছে?
বাংলাদেশে প্রায় ২,৫০০টি নিবন্ধিত এনজিও রয়েছে, যার মধ্যে ২৪০টি আন্তর্জাতিক সংস্থা।
এনজিওর মাধ্যমে কী ধরনের সেবা পাওয়া যায়?
এনজিওগুলো মাইক্রোফাইনান্স, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, দুর্যোগ ত্রাণ, নারী ক্ষমতায়ন এবং পরিবেশ সংরক্ষণের মতো সেবা প্রদান করে।
কীভাবে একটি এনজিওর নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করব?
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর ওয়েবসাইটে গিয়ে তাদের নিবন্ধন নম্বর যাচাই করুন। এছাড়া তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং প্রকল্পের ফলাফল পরীক্ষা করুন।
এনজিওর ঋণ কি নিরাপদ?
যদি এনজিওটি নিবন্ধিত এবং স্বচ্ছভাবে কাজ করে। তবে তাদের ঋণ সাধারণত নিরাপদ। তবে ঋণের শর্তাবলী ভালোভাবে পড়ে নিন।
এনজিও সেক্টরের চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশের এনজিও সেক্টর যতটা সফল, ততটাই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। অর্থায়নের অভাব, সরকারি নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিযোগিতা এই সেক্টরের প্রধান চ্যালেঞ্জ। তবে ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এনজিওগুলো নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে।আরও জানুন: বাংলাদেশের টপ ১০ এনজিও