মার্কেন্টাইল ব্যাংক লোন সম্পর্কে জানেন কী? আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা হয়তো মার্কেন্টাইল ব্যাংক সম্পর্কে প্রথম শুনেছেন। তবে মার্কেন্টাইল ব্যাংক বাংলাদেশের অন্য সকল বেসরকারি ব্যাংকের ন্যায় জনপ্রিয় একটি ব্যাংক। ব্যাংকটি প্রতিনিয়ত তাদের কার্যক্রম সফলতার সাথে পরিচলনা করছে। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা “মার্কেন্টাইল ব্যাংক লোন” সম্পর্কে জানানোর পাশাপাশি মার্কেন্টাইল ব্যাংক সম্পর্কিত সকল তথ্য জানাবো। সেহেতু এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন। 

মার্কেন্টাইল ব্যাংক লোন কী?

মার্কেন্টাইল ব্যাংক লোন হলো বাংলাদেশের অন্যতম বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক মার্কেন্টাইল ব্যাংক পিএলসি কর্তৃক প্রদত্ত আর্থিক সুবিধা। এই আর্থিক সুবিধায় ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে গ্রাহকদের জন্য ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়। এই লোন বিভিন্ন ধরনের আর্থিক চাহিদা পূরণে সহায়তা করে থাকে। যেমন: ব্যক্তিগত খরচ, বাড়ি ক্রয়, গাড়ি ক্রয়, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ইত্যাদি ক্ষেত্রে।  মার্কেন্টাইল ব্যাংকের লোন সুবিধা গ্রাহকদের জন্য বেশ সাশ্রয়ী ও সহজ পরিশোধের শর্তসহ প্রদান করা হয়। গ্রাহকের অবশ্যই মার্কেন্টাইল ব্যাংক সম্পর্কে জেনে নেওয়া প্রয়োজন।

মার্কেন্টাইল ব্যাংক সম্পর্কে

মার্কেন্টাইল ব্যাংক পিএলসি বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। ব্যাংকটি গত ১৯৯৯ সালের ২০ মে প্রতিষ্ঠিতা লাভ করে ও একই বছরে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর অধীনে এটি একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত। ব্যাংকটি ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও বাংলাদেশ জুড়ে এর ব্যাপক শাখা নেটওয়ার্ক রয়েছে। মার্কেন্টাইল ব্যাংক ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদান করে, যার মধ্যে লোন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এবার তবে মার্কেন্টাইল ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। 

মার্কেন্টাইল ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ

মার্কেন্টাইল ব্যাংক গ্রাহকদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন ধরনের লোন প্রদান করে থাকে। বিশেষ করে এসকল লোন গ্রাহকদের বিভিন্ন চাহিদা পূরণে বেশ সহায়ক। মার্কেন্টাইল ব্যাংক লোনের প্রকারভেদের মধ্যে যা রয়েছে তা নিচে উপস্থাপন করা হয়েছে:

  • পার্সোনাল লোন: ব্যক্তিগত খরচ মেটাবার জন্য প্রদান করা হয়। যেমন:শিক্ষা, চিকিৎসা,ভ্রমণ,বিবাহ ইত্যাদি।
  • হোম লোন: ফ্ল্যাট কিংবা বাড়ি ক্রয় বা নির্মাণ ও বাড়ি সংস্কারের জন্য প্রদান করা হয়। 
  • কার লোন: ব্যক্তিগত প্রয়োজন কিংবা অন্য কোন কারনে গাড়ি ক্রয় করার জন্য লোন প্রদান করা হয়।
  • এসএমই লোন: ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার জন্য মূলধন বা ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য এই বিশেষ লোনটি প্রদান করা হয়। 
  • কৃষি লোন: কৃষি কাজের জন্য বীজ ও কৃষিকাজে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য কৃষি লোন প্রদান করা হয়।
  • ব্যবসায়িক লোন: ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য চলতি মূলধনের প্রয়োজন মেটাতে লোনটি ব্যবসায়ীূের প্রদান করা হয়। 

মার্কেন্টাইল ব্যাংক লোন নেওয়ার যোগ্যতা

মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে লোন পেতে অবশ্যই গ্রাহককে নিম্নলিখিত যোগ্যতা পূরণ করতে হবে:

  • আবেদনকারীর বয়স ২১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  • ন্যূনতম মাসিক আয় কমপক্ষে ৩০,০০০ টাকা (পার্সোনাল লোনের জন্য)। অন্য লোনের জন্য কম বেশি হতে পারে। 
  • বেতনভুক্ত কর্মচারী, স্ব-নির্ভর পেশাদার, বা ব্যবসায়ী।
  • ভালো CIBIL স্কোর( ক্রেডিট স্কোর) ও কোনো ঋণখেলাপি রেকর্ড না থাকা।
  • বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে ও বৈধ পরিচয়পত্র থাকতে হবে।

এসকল যোগ্যতা ছাড়াও মার্কেন্টাইল ব্যাংক লোন নিতে বেশ কিছু কাগজপএের প্রয়োজন হয়ে থাকে।

মার্কেন্টাইল ব্যাংক লোনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

লোনের আবেদনের জন্য নিম্নলিখিত কাগজপত্র প্রয়োজন:

  • আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও সদ্য তোলা পার্সপোর্ট সাইজের ছবি। 
  • সর্বশেষ ৬ মাসের আয় বিবরণী বা বেতন স্লিপ।
  • সর্বশেষ ১২ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
  • টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেট।
  • দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি (গ্যাস, বিদ্যুৎ, বা পানি)।
  • গ্যারেন্টারের অর্থাৎ জামিনদারের জাতীয় পরিচয় পএ, ছবি ও প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র প্রদান করতে হবে। 
  • ব্যবসায়ীদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স বা অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
  • হোম লোনের জন্য সম্পত্তির মালিকানা সংক্রান্ত দলিল এবং রাজউকের অনুমোদনপত্র।

মার্কেন্টাইল ব্যাংক লোন কত টাকা পর্যন্ত

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের লোনের পরিমাণ নির্ভর করে লোনের ধরন এবং আবেদনকারীর আর্থিক সক্ষমতার উপর। উদাহরণস্বরূপ:

  • পার্সোনাল লোনের ক্ষেত্রে সাধারণত ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।
  • হোম লোনের ক্ষেত্রে সম্পত্তির মূল্যের ৭০% পর্যন্ত, সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা।
  • কার লোনের ক্ষেএে গাড়ির মূল্যের ৭০% পর্যন্ত।
  • এসএমই লোনের জন্য ব্যবসার ধরন ও প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এই পরিমাণ ব্যাংকের নীতিমালা এবং গ্রাহকের যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে।

মার্কেন্টাইল ব্যাংক লোনের সুদের হার

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের লোনের সুদের হার লোনের ধরন এবং বাজারের অবস্থার উপর নির্ভর করে। সাধারণত গড়ে যে সুদের হার বিদ্যমান থাকে তার মধ্যে রয়েছে:

  • পার্সোনাল লোনে সুদের হার ৯% থেকে ১২% প্রতি বছর।
  • হোম লোনের ক্ষেএে সুদের গার ১০% থেকে ১২% পর্যন্ত হয়ে থাকে
  • কার লোনের ক্ষেত্রে সুদের হার ১০% থেকে ১১% পর্যন্ত হয়ে থাকে। 
  • এসএমই লোনের সুদের হার সাধারণত  ৯% থেকে ১২%। এছাড়া, প্রক্রিয়াকরণ ফি হিসেবে লোনের পরিমাণের ০.৫% এবং আবেদন ফি ৫০০ টাকা ধার্য হয়। 

সুদের হার সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে, তাই সর্বশেষ তথ্যের জন্য ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। 

মার্কেন্টাইল ব্যাংক লোন নেওয়ার পদ্ধতি

মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার পদ্ধতি বেশ সহজতর। মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণের জন্য যেসকল ধাপ অনুসরণ করতে হয় তা নিম্নে উপস্থাপন করা হয়েছে:

  • আপনার নিকটস্থ শাখায় বা অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণ করুন।
  • প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমা দিন।
  • ব্যাংক কর্মকর্তারা আবেদন ও কাগজপত্র যাচাই করবেন।
  • আবেদনকারীর ক্রেডিট ইতিহাস পরীক্ষা করা হবে। পূর্বে ঋণ খেলাপি হলে ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন না আবেদনকারী।
  • সবকিছু ঠিক থাকলে ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে লোন অনুমোদিত হবে।

লোনের টাকা আবেদনকারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে বা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে প্রদান করা হবে।

আরও জানতে পারেনঃ ইসলামী ব্যাংক লোন সুবিধা 

মার্কেন্টাইল ব্যাংক লোন সুবিধা

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের লোন সুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • লোন পরিশোধের মেয়াদ সাধারনত ১ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত কিস্তির সুবিধা।
  • প্রতিযোগিতামূলক সুদের হার যা বর্তমান সময়ে অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় কম সুদে লোন।
  • সাধারণত ৭-১০ দিনের মধ্যে লোন অনুমোদন হয়ে থাকে।
  • কিছু ক্ষেত্রে জামানত ছাড়া লোন পাওয়া যায়।
  • ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক, এবং আবাসনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ঋণ।
  • অনলাইন ও শাখায় সহজে আবেদনের সুযোগ।

মার্কেন্টাইল ব্যাংক যোগাযোগের তথ্য

লোন সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য বা আবেদনের জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন:

  • অফিসিয়াল ওয়েবসাইট: www.mblbd.com
  • হেল্পলাইন: ১৬২৫৭ বা +৮৮০-২-৯৫৭১০০৫
  • ইমেইল: info@mblbd.com
  • প্রধান কার্যালয়: ৬১, দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ
  • নিকটস্থ শাখা: বাংলাদেশ জুড়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শাখাগুলোতে সরাসরি যোগাযোগ করুন।

শেষ কথা

মার্কেন্টাইল ব্যাংক লোন ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক প্রয়োজন মেটাতে একটি নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী সমাধান। ব্যাংকটির প্রতিযোগিতামূলক সুদের হার, সহজ পরিশোধের শর্ত ও দ্রুত প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে এই ব্যাংক গ্রাহকদের আর্থিক স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করে। তবে, লোন নেওয়ার আগে আপনার আর্থিক সক্ষমতা এবং ব্যাংকের শর্তাবলী ভালোভাবে যাচাই করে নিন। সর্বশেষ তথ্যের জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করুন। প্রত্যাশা করি “মার্কেন্টাইল ব্যাংক লোন “ আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে বিস্তারিত তথ্য জানাতে পেরেছি। যে কোন প্রশ্নের জন্য কমেন্ট করে জানান।

অন্যান্য পোস্টগুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *