সিটি ব্যাংক থেকে লোন নিতে চাচ্ছেন কিন্তু সিটি ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় জানেন না? সিটি ব্যাংক থেকে লোন নিতে কি কি লাগে, কিভাবে লোন আবেদন করতে হয় এবং কত টাকা লোন পাওয়া যায় এসব বিষয় জানতে পারবেন এই পোস্টে।

বাংলাদেশের সবথেকে জনপ্রিয় এবং ভালোমানের ব্যাংকগুলোর মাঝে সিটি ব্যাংক অন্যতম। সিটি ব্যাংকে টাকা জমা রাখার পাশাপাশি যে কেউ চাইলে লোন আবেদন করতে পারবেন। সিটি ব্যাংকের বিভিন্ন ক্যাটাগরির লোন পদ্ধতি রয়েছে।

কী কী ধরনের লোন পাওয়া যায়, লোন নিতে কি কি কাগজপত্র লাগে, কত টাকা লোন নেয়া যায় এবং লোন পাওয়ার উপায় নিয়ে বিস্তারিত জানতে শেষ অব্দি পড়ুন।

সিটি ব্যাংক লোন সুবিধা

সিটি ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ধরনের লোন সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে। আপনার প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের লোন নিতে পারবেন। ভিন্ন ক্যাটাগরির লোনের ক্ষেত্রে ভিন্ন মেয়াদ, ভিন্ন ইন্টারেস্ট রেট এবং সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন লোনের পরিমাণ আলাদা হয়ে থাকে।

সিটি ব্যাংক থেকে কী কী খাতের উপর লোন দিয়ে থাকে, তা একটি তালিকায় নিম্নে উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। চলুন, দেখে নেয়া যাক।

  • সিটি ব্যাংক পার্সোনাল লোন
  • সিটি ব্যাংক হোম লোন
  • সিটি ব্যাংক অটো লোন
  • সিটি ব্যাংক স্টুডেন্ট লোন
  • সিটি ব্যাংক সিকিউরড লোন

সিটি ব্যাংক থেকে উপরোক্ত তালিকায় উল্লিখিত খাতগুলোর উপর লোন নিতে পারবেন। এই লোনগুলোর মেয়াদ এবং ইন্টারেস্ট রেট ভিন্ন হয়ে থাকে। এসব লোন সুবিধা নিয়ে নিচে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

সিটি ব্যাংক পার্সোনাল লোন

সিটি ব্যাংক থেকে পার্সোনাল কাজের জন্য পার্সোনাল লোন নিতে পারবেন। সর্বনিম্ন ২ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০ লক্ষ টাকা লোন নিতে পারবেন এই খাতে। ১২ মাস থেকে ৬০ মাস মেয়াদে লোন পরিশোধ করা যাবে। এছাড়া, পার্সোনাল লোনের ক্ষেত্রে সিটি ব্যাংক দিচ্ছে আকর্ষণীয় ইন্টারেস্ট রেট।

২২ বছর বয়স থেকে ৬০ বছর বয়সের মাঝে যে কেউ চাইলে সিটি ব্যাংকের পার্সোনাল লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। পার্সোনাল লোনের জন্য আবেদন করতে কি কি কাগজপত্র লাগে জানতে সিটি ব্যাংকের হেল্পসেন্টারে কল করুন অথবা তাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। এছাড়া, তাদের ব্রাঞ্চে ভিজিট করার মাধ্যমে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন।

সিটি ব্যাংক হোম লোন

ফ্ল্যাট/বাড়ি ক্রয় করার জন্য কিংবা বাড়ি তৈরি করার জন্য সিটি ব্যাংকের হোম লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। হোম লোন নিয়ে সর্বোনিম্ন ১ বছর থেকে ২৫ বছরের মাঝে লোন পরিশোধ করতে পারবেন। এছাড়া, সর্বনিম্ন ৫ লক্ষ টাকা থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত হোম লোন নেয়ার সুবিধা দিচ্ছে সিটি ব্যাংক।

২২ বছর বয়স থেকে ৬৫ বছর বয়সের যে কেউ হোম লোনের আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া, সিটি ব্যাংক হোম লোনের ক্ষেত্রে রয়েছে কম্পিটিটিভ ইন্টারেস্ট রেট। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে জানতে এবং লোন আবেদন করতে তাদের ব্রাঞ্চে ভিজিট করুন।

সিটি ব্যাংক অটো লোন

গাড়ি ক্রয় করতে চান কিন্তু অর্থ সংকট? সিটি ব্যাংক অটো লোন নেয়ার মাধ্যমে যেকোনো গাড়ি ক্রয়ের ৭০% অর্থ পর্যন্ত নিতে পারবেন। সিটি ব্যাংক সর্বনিম্ন ৪ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে ৬০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অটো লোন দিয়ে থাকে।

লোন পরিশোধ করার ক্ষেত্রে ১২ মাস থেকে ৭২ মাস পর্যন্ত মেয়াদ থাকে। লোনের পরিমাণের উপর মেয়াদ নির্ভর করবে। আকর্ষণীয় ইন্টারেস্ট রেটে সিটি ব্যাংক থেকে অটো লোন নিতে পারবেন। ২২ বছর বয়স থেকে ৬৫ বছর বয়সের যে কেউ চাইলে অটো লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

সিটি ব্যাংক স্টুডেন্ট লোন

সিটি ব্যাংক দিচ্ছে স্টুডেন্টদের জন্য লোন সুবিধা। দেশের বাইরে পড়ালেখা করতে যাওয়ার জন্য অর্থের প্রয়োজন হলে স্টুডেন্ট লোনের আবেদন করতে পারবেন সিটি ব্যাংকে। সিটি ব্যাংক থেকে স্টুডেন্ট লোন নিতে পারবেন সর্বনিম্ন ১ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।

আরও পড়ুন>>> মার্কেন্টাইল ব্যাংক লোন  (আপডেট তথ্য)

সর্বনিম্ন ১ বছর থেকে ৫ বছর মেয়াদের মাঝে স্টুডেন্ট লোন নিতে পারবেন। ২২ বছর থেকে ৬০ বছর বয়সের যেকোনো গার্ডিয়ান বা লিগ্যাল গার্ডিয়ান উক্ত লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। লোন আবেদন করার সর্বনিম্ন ৩ মাস আগে ব্যাংক হিসাবে সর্বনিম্ন ১ লক্ষ টাকা জমা রাখতে হবে। স্টুডেন্ট লোন সম্পর্কে আরও জানতে হেল্পসেন্টারে কল করুন অথবা তাদের ব্রাঞ্চে ভিজিট করুন।

সিটি ব্যাংক সিকিউরড লোন

যেকোনো সিকিউরিটি জমা রাখার মাধ্যমে সিটি ব্যাংক থেকে সিকিউরড লোনের আবেদন করতে পারবেন। সিকিউরড লোনের ক্ষেত্রে রিভলভিং পেমেন্ট মেথড রয়েছে। অন্যান্য লোনের মতো এই লোনের মেয়াদ রয়েছে। আপনি কত টাকা লোন নিতে চান তার উপর ভিত্তি করে লোনের মেয়াদ নির্ভর করবে।

সিটি ব্যাংকের হেল্পসেন্টারে কল করে কিংবা নিকটস্থ সিটি ব্যাংক ব্রাঞ্চে যোগাযোগ করে সিকিউরড লোন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন।

সিটি ব্যাংক লোন পেতে কি কি লাগে

সিটি ব্যাংক লোন নেয়ার পূর্বে নির্ধারণ করতে হবে কোন ধরনের লোন নিতে চান। সিটি ব্যাংক কী কী লোন সুবিধা দেয় তা ইতোমধ্যে উপরে উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। লোনের আবেদন করতে যেসব কাগজপত্র লাগে তার একটি তালিকা নিচে উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে।

  1. সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  2. ভোটার আইডি কার্ড/পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি
  3. ইনকাম সোর্সের প্রমাণপত্র
  4. ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য ইনস্ট্যান্ট ডিপোজিট এর টাকা
  5. একটি সচল মোবাইল নাম্বার
  6. নমিনির ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি
  7. নমিনির সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  8. ঠিকানা যাচাই করার জন ইউটিলিটি বিলের কপি

এসব কাগজপত্র ছাড়াও সিটি ব্যাংক থেকে যে ধরনের লোনের আবেদন করবেন, তার উপর ভিত্তি করে আরও প্রয়োজনীয় অনেক কাগজপত্র লাগতে পারে। সিটি ব্যাংক থেকে লোন আবেদন করতে কোন লোনের ক্ষেত্রে কী কী কাগজপত্র লাগবে তা জানার জন্য সিটি ব্যাংকের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। এজন্য, এই লিংকে ক্লিক করুন

সিটি ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়

সিটি ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় হচ্ছে ব্রাঞ্চে যোগাযোগ করা। ব্রাঞ্চে যোগাযোগ না করে সিটি ব্যাংকে লোন আবেদন করতে পারবেন না। যদিও বিকাশ থেকে লোনের আবেদন করা যায়, তবে সেটি ভিন্ন বিষয়। সেটি নিয়ে আমরা নিচে আলোচনা করেছি যা একটু পরেই জানতে পারবো।

সিটি ব্যাংকে লোনের আবেদন করার জন্য সিটি ব্যাংকের হেল্পসেন্টারে কল করুন। এজন্য, বাংলাদেশ থেকে 16234 নাম্বারে এবং বিদেশ থেকে +88028331040 নাম্বারে কল করুন। কল করে তাদেরকে জানাতে হবে যে আপনি লোন নিতে আগ্রহী।

তাহলে, তারা আপনাকে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারবে। এরপর, আপনি যে লোন নিতে চান, উক্ত লোন নিতে কী কী কাগজপত্র লাগবে তা সংগ্রহ করুন। অতঃপর, সিটি ব্যাংকের নিকটস্থ যেকোনো ব্রাঞ্চে যোগাযোগ করুন। সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে জানান যে আপনি লোন নিতে আগ্রহী।

অতঃপর, তারা যেসব প্রশ্ন করবে সেগুলোর উত্তর দিন। আপনার কাগজপত্র তাদেরকে দিন। যাচাই-বাছাই করার পর তারা আপনার লোনের জন্য আবেদন ফরম পূরণ করা শুরু করবে।

লোন আবেদন ফরম পূরণ করার পর সাবমিট করলে লোন প্রসেসিং হতে সময় লাগবে। প্রসেসিং হয়ে লোনের অনুমোদন দেয়া হলে আপনি ব্যাংক হিসাব থেকে লোনের টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।

এই পদ্ধতিতে সিটি ব্যাংকে লোনের আবেদন করতে পারবেন এবং লোনের টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। তবে, আপনি চাইলে বিকাশের মাধ্যমে সিটি ব্যাংক থেকে অল্প পরিমাণ অর্থ লোন নিতে পারবেন। কিভাবে নিতে হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হয়েছে।

বিকাশের মাধ্যমে সিটি ব্যাংক থেকে লোন

সিটি ব্যাংক থেকে বিকাশের মাধ্যমে লোন দিয়ে থাকে। তবে, যে কেউ চাইলেই এই লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। এজন্য, তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ভালো পরিমাণ লেনদেন করতে হবে।

যখন আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে সব ধরনের লেনদেন বেশি পরিমাণে করবেন, বিশেষ করে ব্যাংক টু বিকাশ এবং বিকাশ টু ব্যাংক। তখন, বিকাশ থেকে লোন অপশন চালু হবে। এই লোন অপশন থেকেই আপনি লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

ব্যক্তিভেদে বিকাশ অ্যাকাউন্টে লেনদেনের পরিমাণের উপর নির্ভর করে লোনের পরিমাণ ভিন্ন হয়ে থাকে। ১৪ হাজার টাকা/২০ হাজার টাকা/৩০ হাজার টাকা ইত্যাদি পরিমাণে লোন নিতে পারবেন বিকাশের মাধ্যমে। বিকাশের মাধ্যমে লোন নিলে তা সিটি ব্যাংক থেকেই দিবে।

লোনের টাকা বিকাশের মাধ্যমেই পরিশোধ হবে। তাই, অল্প পরিমাণ লোনের প্রয়োজন হলে সিটি ব্যাংকের এই ফিচার ব্যবহার করে বিকাশ ব্যবহার করেই লোন নিতে পারবেন। লোনের আবেদনের সময় আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টের তথ্য ব্যবহৃত হবে।

শেষ কথা

সিটি ব্যাংক লোন সুবিধা, লোন নিতে কী কী লাগে, লোন পাওয়ার উপায় এবং বিভিন্ন ধরনের লোন সুবিধা নিয়ে এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া, বিকাশের মাধ্যমে কিভাবে সিটি ব্যাংকের লোন পাওয়া যায় সেটিও আলোচনা করা হয়েছে এখানে।

যারা সিটি ব্যাংক থেকে লোন নিতে ইচ্ছুক, তারা পোস্টে উল্লিখিত তথ্যগুলো মনোযোগ সহকারে পড়লে লোন আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া, যেকোনো প্রশ্ন থাকলে নিচে সংযুক্ত প্রশ্নোত্তরগুলো দেখতে পারেন।

সিটি ব্যাংক লোন সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর

সিটি ব্যাংক লোন কিভাবে পাওয়া যায়?

সিটি ব্যাংক লোন নেয়ার জন্য নিকটস্থ যেকোনো ব্রাঞ্চে যোগাযোগ করতে হবে। ব্রাঞ্চে যোগাযোগ করে কী লোন নিতে চান, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং লোন আবেদন সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন।

সিটি ব্যাংকের হোম লোনের সুদের হার কত?

সিটি ব্যাংকের হোম লোনের সুদের হার নির্ভর করে মূলত কত টাকা লোন নিবেন এবং কত বছর মেয়াদে লোন নিবেন তার উপর।

সিটি ব্যাংকের লোনের ইন্টারেস্ট রেট কত?

সিটি ব্যাংক লোনের ইন্টারেস্ট রেট সাধারণত ৯% থেকে ১৩% । তবে, লোনের পরিমাণ এবং মেয়াদের উপর নির্ভর করে ইন্টারেস্ট রেট কম বা বেশি হয়ে থাকে।

বিকাশে কত টাকা লোন দেয়?

একজন গ্রাহক বিকাশে ৫০০ টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত লোনের আবেদন করতে পারবেন।

অন্যান্য পোস্টগুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *