হাউজ লোন কিভাবে পাব? এমন প্রশ্ন আমাদের কম বেশি সবার রয়েছে তবে বর্তমানে। আমাদের সাধ থাকলেও পর্যাপ্ত পরিমানে অর্থ অর্থাৎ সাধ্য না থাকলেও এখন খুব সহজেই জমি কিংবা ফ্লাট ক্রয় করার জন্য হাউজ লোন (হোম লোন) নেওয়া যায়। তবে হাউজ লোন চাইলেই আপনাকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হাউজ লোন প্রদান করবেন না। হাউজ লোন অর্থাৎ হোম লোন হিসেবে একজন গ্রাহক ব্যাংক হতে সর্বাধিক ২ কোটি টাকা লোন নিতে পারবেন। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে জানাবো “হাউজ লোন কিভাবে পাবেন” এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। তাহলে দেরি কেন আসুন জেনেনি হাউজ লোন কিভাবে পাব সম্পর্কে।
হাউজ লোন কিভাবে পাবেন জানুন
হাউজ লোন যা হোম লোন হিসেবে পরিচিত বাংলা পরিভাষা অনুযায়ী “বাড়ি তৈরির ঋণ” । হাউজ লোন পেডতে হলে অবশ্যই বেশ কিছু নিয়মনীতি অনুসরণ করে হোম লোন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলির নিকট আবেদন করতে হবে। উক্তবপ্রতিষ্ঠানটি যদি আপনর তথ্য যাচাই-বাছাই করে যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করেন তাহলেই আপনি লোন পাবার জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবেন।
সাধারণত বাড়ি তৈরির ঋণ পেতে হলে অবশ্যই উক্ত আবেদনকারীকে বাংলাদেশি নাগরিক ও বাংলাদেশের যে প্রতিষ্ঠান থেকে হোম লোন নিবেন উক্ত ব্যাংকের পলিসি অনুযায়ী নির্ধারিত বয়স হতে হবে। বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাংকের হোম লোনের আবেদন করার নূন্যতম বয়স ২১ বছর থেকে ২৫ বছর ও সর্বাধিক বয়স ৬৫ বছর (অবশ্যই লোন পরিশোধ করার সামর্থ্য থাকতে হবে)।
হোম লোন পাবার জন্য অবশ্যই আবেদনকারীর প্রতিমাসে নূন্যতম আয় ২৫ হাজার টাকা হতে হবে চাকরিজীবিদের ক্ষেত্রে তবে ব্যবসায়ী ও পেশাদার কর্মের সাথে যারা যুক্ত রয়েছেন তাদের মাসিক আয় আরো বেশি হতে হবে। তবে ব্যাংকের পলিসির উপর নির্ভর করে উক্ত ব্যাংক কত টাকা গ্রাহকোর মাসিক আয় চান। হাউজ লোন কিভাবে পাব এটি তো জানতে পেরেছেন এবার তবে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
যারা হাউজ লোন পাবার জন্য আবেদন করতে পারবেন
বাংলাদেশের ক্রেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাংলাদেশ সকল ব্যাংকের বেশ কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। এসকল নিয়মকানুনএর উপর নির্ভর করে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলি হাউজ লোন প্রদান করে থাকে। তবে বাংলাদেশে বসবাসরত সকল গ্রাহক হাউজ লোনের জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হন না। তবে যেসকল গ্রাহকেরা হাউজ লোনের জন্য উপযুক্ত তাদের সম্পর্কে নিন্মে উপস্থাপন করা হলো:
- অবশ্যই বাড়ি তৈরি করার জন্য বৈধ্য সম্পত্তি থাকতে হবে।
- প্রতি মাসে নূন্যতম আয় থাকতে হবে যা অবশ্যই বৈধ হতে হবে। নূন্যতম আয় বাংকের নীতিমালার নির্ভর করে।
- শিক্ষক
- সরকারি কর্মচারী
- ইঞ্জিনিয়ার
- ডাক্তার
- আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ ব্যাংকের চাকরিজীবী
- বউজাত কোম্পানি নির্বাহী চাকরিজীবী
- স্বতন্ত্র ক্লায়েন্ট
- কর্পোরেট ক্লায়েন্ট
- বেসরকারি চাকরি করছেন উচ্চ বেতন এমন ব্যক্তি।
- ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গ।
বাংলাদেশের যে সকল ব্যাংক হাউজ লোন প্রদান করে
বাংলাদেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক হাউজ লোন প্রদান করে থাকে তবে এ সকল ব্যাংকের মধ্যে যে সকল ব্যাংক সর্বাধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে সকল ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে; ডাচ বাংলা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক ইত্যাদি। তবে বাংলাদেশের নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আইডিএলসি হাউজ লোন প্রদান করছে গ্রাহকদের। আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হোম লোন সম্পর্কিত তথ্য জেনে নিতে পারেন:
হাউজ লোনের বৈশিষ্ট্য
বাড়ি তৈরি করার জন্য হোম লোন অর্থাৎ হাউজ লোন অন্যতম একটি উপায়। খুব কম পরিমাণ ইন্টারেস্ট হারে লোন গ্রহণ করে গ্রাহক তার স্বপ্নের বাড়ি কিংবা ফ্লাট তৈরি নিতে পারেন। তবে হাউস লোনের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্য লোন থেকে পৃথক করেছে। এ সকল বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে:
- গ্রাহকেরা ঋণ পরিশোধ করার জন্য সর্বোচ্চ ২০ বছর থেকে ২৫ বছর সময় পেয়ে থাকেন।
- বাড়ি তৈরি করার জন্য কিংবা ফ্ল্যাট ক্রয় করার জন্য আর সর্বাধিক ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পাওয়া যায়।
- মাসিক কিস্তির মাধ্যমে দ্রুত ঋণ পরিশোধ করা যায়।
- প্রতিযোগিতামূলক সুদের হার।
- গ্রাহকেরা তাদের মোট সম্পত্তির ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পেয়ে থাকেন।
- হোম লনে সুতির হার নির্ধারণের শর্ত প্রক্রিয়া থাকে।
- কোন গোপন চার্জ নেই।
- সময়ের পূর্বে লোন পরিশোধ করার উপায় রয়েছে।
হাউজ লোন পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
হাউজ লোন পাওয়ার জন্য বেশ কিছু কাগজপত্র অবশ্যই ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে প্রদান করতে হবে। এই সকল কাগজপত্র ব্যাংক কর্মকর্তা পর্যালোচনা করে আপনার লোনটি অনুমোদন করবে। এসকল কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে:
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র স্পষ্ট ফটোকপি ও পাসপোর্ট সাইজের সদ্য তোলা রঙিন ছবি প্রয়োজন হবে। সাধারণত দই কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবির প্রয়োজন হয় তবে সাথে অতিরিক্ত ছবি রাখবেন।
- আবেদনকারী যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স কিংবা পাসপোর্ট থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই সত্যায়িত ফটোকপি প্রদান করতে হবে ও ফটোকপি অবশ্যই স্পষ্ট হতে হবে।
- আবেদনকারীর অবশ্যই জামিনদাতা প্রয়োজন হবে এক্ষেত্রে জামিনদাতা তার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি বা পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারী কিংবা জামিনদাতা চাকরিজীবী হয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই অফিস আইডি কার্ডের ফটোকপি অথবা ব্যবসায়ী বা পেশাদার কর্মের সাথে নিযুক্ত হলে ভিজিটিং কার্ডের ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
- ঠিকানা প্রমাণের জন্য ইউটিলিটি বিল এর ফটোকপি প্রদান করতে হবে (বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানি বিল, পৌরসভার করের স্পষ্ট ফটোকপি)।
- আবেদনকারীর সর্বশেষ প্রধানকৃত ই-রিটানের ফটোকপি বা ট্যাক্স সার্টিফিকেটের ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
- বিগত ৬ মাসের কিংবা ১২ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারী যদি বাড়ির মালিক হয়ে থাকেন বা সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র বা ইজারার চুক্তিপত্র প্রদান করতে হবে (যদি থাকে)।
- আবেদনকারী যদি ক্রেডিট কার্ড থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই ক্রেডিট কার্ডের বিস্তারিত তথ্য প্রদান করতে হবে এবং লেনদেনের স্টেটমেন্ট বিগত ৬ মাসের প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারীর পেশাগত দক্ষতা ভেদে,চাকরিজীবীদের জন্য স্যালারি সার্টিফিকেট, ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স ও অন্যান্য ডকুমেন্টস প্রদান করতে হবে।
- অবশ্যই সরকারের অনুমোদিত ইঞ্জিনিয়ারের কর্তৃক নকশা বা পরিকল্পনা অনুমোদনের চিঠি প্রয়োজন হবে।
- বাড়ি নির্মাণের অনুমতির প্রমাণপত্র।
- জমির বিস্তারিত তথ্য প্রদান করতে হবে।যেমন: জমির দলিল, অ্যাপার্টমেন্টের মালিকানা তথ্য।
এ সকল কাগজপত্র ছাড়া অন্য কোন কাগজপত্র প্রয়োজন হলে আপনি যে ব্যাংক থেকে হাউজ লোন নিতে যাচ্ছেন উক্ত ব্যাংকের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা আপনাকে এ বিষয়ে অবহিত করবেন।
হাউজ লোন নেওয়ার যোগ্যতা
বাংলাদেশের সকল ব্যাংকের বেশ কিছু শর্তাবলী রয়েছে, উক্ত সকল শর্তাবলী অনুসরণ করলে একজন গ্রাহক উক্ত হাউজ লোনের জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হন।এ সকল শর্তাবলির মধ্যে রয়েছে:
- আবেদনকারীর বয়স সর্বনিম্ন ২১ বছর থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত এর মধ্যে হতে হবে। তবে আবেদনের সর্বাধিক বয়সের ক্ষেত্রে ৬৫ বছরের মধ্যে হতে হবে তবে কিছু কিছু ব্যাংকে ৭০ বছর পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হন।
- প্রতিমাসে নূন্যতম ২০,০০০ টাকা থেকে ৪০,০০০ টাকা আয় হতে হবে। ব্যাংকের নীতিমালার উপর নির্ভর করে উক্ত ব্যাংক কত টাকা মাসিক আয় চাচ্ছেন। বাংলাদেশের নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ব্যাংক মাত্র ২০ হাজার টাকা মাসিক আয়ে হোম লোন প্রদান করছে।
- সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট নির্ভুলতার সাথে প্রদান করতে হবে।
কিভাবে হাউজ লোন পাওয়া যাবে
হাসান পাওয়ার জন্য আপনার যে ব্যাংকে একাউন্ট রয়েছে কিংবা আপনি যে ব্যাংক থেকে ও হোম লোন নিতে চাচ্ছেন উক্ত ব্যাংকের শাখা অফিসে গিয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে আপনার চাহিদা অনুযায়ী হাউজ লোন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানান ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদান করুন।
হোম লোনের সুদের হার কত
হোম লোনের সুদের হার ব্যাংক ভেদে ৮% থেকে ১৪% পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে সুদের হার মোট অর্থ ও লোন পরিশোধ করার সময়ের উপর নির্ভর করে।
হাউজ লোন ক্যালকুলেটর
এক্ষেত্রে আপনি আপনার নিকটস্থ ব্যাংকে যোগাযোগ করুন কিংবা উক্ত ব্যাংক সম্পর্কে অনুসন্ধান করুন।
সার কথা
প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন থাকে একটি সুন্দর বাড়ি তৈরি করার। কিন্তু সমাজে বসবাসরত অধিকাংশ মানুষের স্বপ্ন থাকলেও সাধ্য থাকে না তা বাস্তবে রূপান্তরিত করার। আপনার স্বপ্নের বাড়ি তৈরি করার জন্য আপনার পছন্দ অনুযায়ী যে কোন ব্যাংকের আপনার নিকটস্থ শাখায় গিয়ে যোগাযোগ করুন। প্রত্যাশা করি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে “হাউজ লোন কিভাবে পাব” এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও আপনার আবেদনকৃত হাউজ লোনটি দ্রুত অনুমোদিত হবে।