আশা এনজিও লোন পদ্ধতি
ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে বিশেষ করে বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নয়নে। গ্রামীণ পর্যায়ে গ্রাহকদের ভরসার আরেক নাম আশা সমিতি। আশা এনজিও লোন পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ একটি নিয়ম। যা দরিদ্র জনগণের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সমাধান।
আশা সমিতি গ্রামীণ ও শহুরে জনগণের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সরবরাহ করে, যা জনগণের অর্থনৈতিক উন্নতি (আর্থিক স্বচ্ছলতা) ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজআমরা আপানকে আশা এনজিও লোন পদ্ধতি এটি জানানোর পাশাপাশি লোনের প্রক্রিয়া, শর্তাবলী, সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাবো যা আপনাকে লোন নিতে সাহায্য করবে। তবে প্রথমকেই আপনাকে আশা এনজিও সম্পর্কে তথ্য জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
আশা এনজিও সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
আশা এনজিও/আশা সমিতি মো. শফিকুল হক চৌধুরী দ্বারা ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই৷ এনজিওটি বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থাপনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে ও আশা সমিতির লক্ষ্য হচ্ছে গ্রাহকদের দারিদ্র্য বিমোচন ও তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা নিশ্চিত করা। বর্তমানে আশা এনজিও এর সারাদেশে ৬৪টি জেলায় ৩,০০০+ শাখা ও ৬৩ লাখেরও বেশি গ্রাহক নিয়ে কাজ করছে। এর পাশাপাশি। আন্তর্জাতিকভাবে আশা এনজিও সম্মানিত হয়ে বিশ্বের ক্ষুদ্রঋণ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
আশা এনজিও লোন পদ্ধতি
আশা এনজিও লোন পদ্ধতি বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জন্য বিভিন্ন ভাবে তৈরি করা হয়েছে।, যাতে সকল জনগণ তাূের চাহিদা অনুযায়ী খুব সহজে সহজে আর্থিক সহায়তা লাভ করতে পারেন আশা এনজিও থেকে। নিম্নে আশা এনজিও এর লোন পদ্ধতি উপস্থাপন করা হয়েছে:
- আশা এনজিও এর একটি শাখায় বিভিন্ন সভা থাকে। এ সকল প্রতিটি সভা বেশ কিছু গ্রাহকের দ্বারা তৈরি হয়। এক্ষেত্রে কারো লোনের প্রয়োজন হলে তারা এসকল এসকল সভা থেকে মাঠ কর্মীর নিকট লোনের আবেদন পএ জমা দিতে পারেন প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সহ।
- প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দেওয়ার পর আশা এনজিও এর শাখার কর্মকতারা সকল ডকুমেন্টস বিবেচনা করে লোন অনুমোদন করবেন।
সাধারণত আশা এনজিও থেকে লোন পেতে সর্বনিম্ন ৭ দিন থেকে সর্বাধিক ১৫ দিন প্রয়োজন হয়। আশা এনজিও ৩ ধরনের লোন গ্রাহকদের প্রদান করে থাকে। এসকল লোনের মধ্যে রয়েছে:
- প্রাথমিক লোন: ক্ষুদ্র ঋণ যা সাধারণত ছোট ব্যবসা বা মৌসুমি কাজের জন্য প্রাথমিক লোন প্রদান করা হয়।
- বিশেষ লোন: বিশেষ উদ্দেশ্যে এই লোনটি প্রদান করা হয়। যেমন: শিক্ষা, স্যানিটেশন, বা মৌসুমি প্রয়োজনের জন্য ঋণ।
- MSME লোন: ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য বড় পরিসরে ঋণ সুবিধা পাওয়া যায় MSME।
আশা এনজিও-এর লোনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো জামানতবিহীন ঋণ গ্রহণ করা যায়। তবে আশা এনজিও থেকে লোন গ্রহণের জন্য অবশ্যই গ্যারেন্টারের প্রয়োজন হয়।
আশা এনজিও লোন পাওয়ার জন্য যোগ্যতা
আশা এনজিও লোন নিতে হলে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়। মূলত, আপনার বয়স, নাগরিকত্ব, আয়ের উৎস এবং পরিবারের আর্থিক স্থিতি ইত্যাদি বিষয়গুলো যাচাই করা হয়। প্রধান যোগ্যতার শর্তগুলো নিম্নরূপ:
- অবশ্যই নূন্যতম ১৮ বছর বয়স থেকে সর্বাধিক ৬৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
- বিবাহিত হতে হবে: শুধুমাত্র বিবাহিত ব্যক্তিরা লোন আবেদন করতে পারবেন।
- স্থায়ী বাসিন্দা: আবেদনকারীর স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে এবং স্থানীয় শাখার মাধ্যমে লোন গ্রহণ করতে পারবেন।
- আয়ের উৎস: চাকরি, ব্যবসা বা অনান্য আয়ের উৎস থাকতে হবে।
- পরিবারের আর্থিক অবস্থা: কিছু ক্ষেত্রে আবেদনকারীর পরিবারের আর্থিক অবস্থা যাচাই করা হয়।
- এছাড়া, দ্বিতীয়বার লোন নেয়ার জন্য নমিনি (গ্যারান্টার) থাকতে হবে।
আশা এনজিও লোন পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আশা এনজিও থেকে লোন পেতে কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। এসকল কাগজপএ অবশ্যই জমা দিতে হবে। এসকল নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে:
- জাতীয় পরিচয়পত্র/ভোটার আইডি কার্ড (এটি অবশ্যই অনুলিপি সহ)
- পাসপোর্ট সাইজের সদ্য তোলা ছবি (২ কপি)
- জমির দলিল (যদি থাকে) সাধারণত প্রয়োজন হয়না, তবে কিছু ক্ষেএে প্রয়োজন হয়।
- আয়ের প্রমাণ (যদি প্রযোজ্য হয়)।
- বৈধ ঠিকানা প্রমাণ (যেমন, সিটি কর্পোরেশন সার্টিফিকেট বা স্থানীয় চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট)
আশা এনজিও লোন পদ্ধতি : ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া
আশা এনজিও লোনের প্রক্রিয়া বেশ সহজ ও দ্রুত। নিম্নে উপস্থাপিত ধাপ সমূহ অনুসরণ করে আপনি দ্রুত লোন পেতে পারেন।
- প্রথমে আপনার নিকটস্থ শাখায় গিয়ে আবেদন জানাতে হবে। শাখায় না গিয়েই সভা থেকে মাঠ কর্মীর মাধ্যমে লোনের আবেদন করা যায়।
- আপনি দ্রুত ফর্ম পূরণ করে এখানেই জমা দিতে পারবেন।
- আপনার প্রদানকৃত কাগজপত্র যাচাইয়ের পর লোনটি অনুমোদন হবে।
- লোনটি অনুমোদিত হলে, আপনাকে কিস্তির সময়সূচি এবং পরিশোধের শর্ত জানিয়ে দ্রুত সময়ে লোনের অর্থ বিতরণ করা হবে।
- সাধারণত লোন পেতে ৭-১০ কার্যদিবস সময় প্রয়োজন হয়ে থাকে।
আশা এনজিও লোনের সুবিধা এবং অসুবিধা
যেকোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা এনজিও এর নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য হয়েছে এ সকল বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে জনগণ এ সকল এনজিও থেকে সুযোগ-সুবিধা লাভ করে থাকেন। তবে এক্ষেত্রে আশা এনজিও এর ব্যতিক্রম নয় আশা এনজিও থেকে গ্রাহকরা বিভিন্ন ধরনের সুবিধা লাভ করতে পারেন তেমনি বেশ কিছু অসুবিধা তাদের মনে হতে পারে। নিম্মে আমরা আশা এনজিও লোনের সুবিধা ও অসুবিধা উপস্থাপন করেছি:
সুবিধা:
- লোন নিতে জামানত জমা দিতে হয় না।
- লোন প্রদান প্রক্রিয়া দ্রুত এবং সহজ।
- দেশে প্রায় সকল গ্রামীণ এলাকায় আশা এনজিও থেকে লোন পাওয়া যায়।
আশা এনজিও লোন পদ্ধতির প্রভাব
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আশা এনজিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে বড় ব্যবসায়ী ও নারীদের আর্থিক উন্নয়নে সর্বদা তারা পাশে রয়েছে।
সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)
আশা এনজিও থেকে লোন নিতে কত দিন সময় লাগে?
প্রক্রিয়া সাধারণত ৭-১০ কার্যদিবস সময় নেয়।
আশা এনজিও এর সুদের হার কি পরিবর্তনযোগ্য?
হ্যাঁ, সুদের হার পরিবর্তিত হতে পারে।
আশা এনজিও এর কিস্তি কীভাবে পরিশোধ করতে হয়?
কিস্তি সপ্তাহিক বা মাসিক হতে পারে, আপনার লোনের ধরণের উপর নির্ভর করে।
উপসংহার
আশা এনজিও লোন পদ্ধতি অনুসরণ করে একজন গ্রাহক খুব সহজেই আশা এনজিও থেকে লোন নিতে পারেন। বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে কাজ করছে আশা এনজিও। আশা এনজিও এর সহজ শর্তাবলী, জামানতবিহীন ঋণ সুবিধা, এবং দ্রুত প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে এটি অনেকের জীবনযাত্রা উন্নত করেছে। তবে, লোন গ্রহণ করার পূর্বে সুদের হার ও কিস্তি পরিশোধের শর্তগুলো ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে “আশা এনজিও লোন পদ্ধতি “ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে পেরেছি। আর্টিকেল সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদের জানাতে পারেন কমেন্ট করে।