টিএমএসএস লোন সম্পর্কে আমরা প্রায়শই অনলাইনে অনুসন্ধান করে থাকি।টিএমএসএস অর্থাৎ ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা। টিএমএসএস এনজিওটি তাদের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে। এই সংস্থার অন্যতম জনপ্রিয় কার্যক্রম হলো গ্রাহকদোর ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করা। আর এই ক্ষুদ্র ঋণটি বিশেষ করে “টিএমএসএস লোন” নামে পরিচিত। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা টিএমএসএস লোন সম্পর্কিত সকল তথ্য, যোগ্যতা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, শর্তাবলি, সুবিধা,শাখা সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তথ্য জানাবো। সেহেতু শেষ হয়ে পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
টিএমএসএস লোন কি?
টিএমএসএস লোন হলো টিএমএসএস এনজিওর একটি ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি। এই লোনটি সাধারণত গ্রামীণ পর্যায়ে নিম্ন-আয়ের মানুষদের ব্যবসা, কৃষি, শিক্ষা এবং অন্যান্য প্রয়োজন মেটানোর জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। প্রফেসর ড. হোসনে আরা বেগমের নেতৃত্বে ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা শাখার মাধ্যমে এই ঋণ পরিষেবা প্রদান করছে টিএমএসএস এনজিও। টিএমএসএস লোনের মূল লক্ষ্য হলো দারিদ্র্য বিমোচন ও নারী ক্ষমতায়ন। গ্রাহকেরা নূন্যতম ১০,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ননির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত লোন গ্রহণ করে থাকেন। যা আবেদনকারীর প্রয়োজন ও যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে।
টিএমএসএস এনজিও শাখা তালিকা
টিএমএসএস বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায় তাদের শাখা প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (https://tmss-bd.org) অনুসারে, টিএমএসএস-এর শাখাগুলো গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে বিস্তৃত। কিছু উল্লেখযোগ্য শাখার অবস্থান নিম্নরূপ:
- প্রধান কার্যালয়: টিএমএসএস ভবন, ৬৩১/৫, পশ্চিম কাজীপাড়া, মিরপুর-১০, ঢাকা-১২১৬
- ফাউন্ডেশন অফিস: ঠেঙ্গামারা, রংপুর রোড, বগুড়া-৫৮০০
- অন্যান্য শাখা: বগুড়া, রংপুর, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায়।
শাখার সম্পূর্ণ তালিকা এবং যোগাযোগের তথ্যের জন্য আপনি টিএমএসএস-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে পারেন বা স্থানীয় শাখায় যোগাযোগ করতে পারেন। এক কথায় যদি বলা হয় বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে তাদের শাখা রয়েছে।
টিএমএসএস শাখা কতটি?
২০২৫ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, টিএমএসএস-এর বাংলাদেশজুড়ে ১০০০-এরও বেশি শাখা রয়েছে। যা দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় বিস্তৃত। এই শাখাগুলো ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ, সঞ্চয় সংগ্রহ ও অন্যান্য উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। শাখার সংখ্যা সময়ের সাথে বাড়তে পারে, তাই সঠিক তথ্যের জন্য টিএমএসএস-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা স্থানীয় অফিসে যোগাযোগ করা উচিত।
টিএমএসএস লোন পাওয়ার যোগ্যতা
টিএমএসএস লোন পাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করতে হয়। এই যোগ্যতাগুলো নিম্নরূপ:
- জাতীয়তা: আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- বয়সসীমা: সাধারণত ১৮ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
- আয়ের উৎস: আবেদনকারীর একটি নিয়মিত আয়ের উৎস থাকতে হবে, যেমন ব্যবসা, কৃষি, বা অন্য কোনো পেশা।
- রেফারেন্স: টিএমএসএস-এর বিদ্যমান কোনো সদস্য বা নিয়মিত কিস্তি প্রদানকারী গ্রাহকের রেফারেন্স থাকলে লোন পাওয়া সহজ হয়। তবে রেফারেন্স ছাড়াও আবেদন করা যায়।
- ঋণখেলাপি নয়: আবেদনকারী অন্য কোনো ব্যাংক বা এনজিও থেকে ঋণখেলাপি হলে যোগ্য বিবেচিত হবেন না।
টিএমএসএস লোনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
টিএমএসএস লোনের জন্য আবেদন করতে নিম্নলিখিত কাগজপত্র জমা দিতে হবে:
- জাতীয় পরিচয়পত্র: আবেদনকারী এবং গ্যারান্টারের জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি: সাধারণত ২-৪ কপি সদ্য তোলা ছবি।
- নাগরিকত্ব সনদ: স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা থেকে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব সনদ।
- আয়ের প্রমাণ: ব্যবসা বা আয়ের উৎস সম্পর্কিত প্রমাণপত্র (যদি প্রযোজ্য হয়)।
- ট্রেড লাইসেন্স: ব্যবসায়িক ঋণের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সের কপি (প্রযোজ্য হলে)।
- অন্যান্য: শাখার নির্দেশনা অনুযায়ী অতিরিক্ত কাগজপত্র, যেমন ভাড়া চুক্তিপত্র বা প্রকল্পের আয়-ব্যয় বিবরণী।
আবেদনের সময় শাখা কর্মকর্তারা আপনার বাসস্থান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে পারেন।
টিএমএসএস লোনের শর্তাবলি
টিএমএসএস লোন গ্রহণের জন্য কিছু শর্ত পালন করতে হয়, যা নিম্নরূপ:
- সুদের হার: টিএমএসএস লোনের সুদের হার সাধারণত ১০% থেকে ১২% এর মধ্যে থাকে, যা অন্যান্য এনজিওর তুলনায় তুলনামূলক কম।
- কিস্তি পরিশোধ: ঋণের কিস্তি সাপ্তাহিক বা মাসিক ভিত্তিতে পরিশোধ করতে হয়। বিকাশের মাধ্যমেও কিস্তি পরিশোধের সুবিধা রয়েছে।
- মেয়াদ: ঋণের মেয়াদ সাধারণত ১২ থেকে ৩৬ মাস হয়, যা ঋণের পরিমাণ ও প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে।
- জামানত: কিছু ক্ষেত্রে গ্যারান্টার বা জামানত প্রয়োজন হতে পারে, তবে ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে জামানতবিহীন ঋণও পাওয়া যায়।
- ব্যবহারের উদ্দেশ্য: ঋণ অবশ্যই উৎপাদনমুখী কাজে (যেমন ব্যবসা, কৃষি) ব্যবহার করতে হবে।
টিএমএসএস লোনের সুবিধা
টিএমএসএস লোনের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, যা এটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছে:
- নিম্ন সুদের হার: অন্যান্য এনজিওর তুলনায় টিএমএসএস-এর সুদের হার তুলনামূলক কম।
- সহজ প্রক্রিয়া: আবেদন প্রক্রিয়া সহজ এবং দ্রুত, বিশেষ করে রেফারেন্স থাকলে।
- নমনীয় কিস্তি: সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তির সুবিধা এবং বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধের ব্যবস্থা।
- নারী ক্ষমতায়ন: টিএমএসএস বিশেষভাবে নারীদের জন্য ঋণ প্রদানে অগ্রাধিকার দেয়, যা নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক।
- দেশব্যাপী শাখা: বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে শাখা থাকায় স্থানীয়ভাবে সহজে ঋণ পাওয়া যায়।
- অতিরিক্ত সুবিধা: ঋণের পাশাপাশি টিএমএসএস সঞ্চয়, প্রশিক্ষণ, এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো সুবিধাও প্রদান করে।
আরও জানতে পারেনঃ সেবা এনজিও শাখা সমূহ ও লোন আপডেট
শেষ কথা
টিএমএসএস লোন বাংলাদেশের গ্রামীণ ও নিম্ন-আয়ের মানুষদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য আর্থিক সমাধান। এই ঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে ব্যবসা, কৃষি, এবং অন্যান্য উৎপাদনমুখী কাজে আর্থিক সহায়তা পাওয়া সম্ভব। তবে, ঋণ গ্রহণের আগে শর্তাবলি, সুদের হার, এবং কিস্তি পরিশোধের বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে নেওয়া জরুরি। টিএমএসএস-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (https://tmss-bd.org) বা স্থানীয় শাখায় যোগাযোগ করে আপনি আরও বিস্তারিত তথ্য পেতে পারেন।
আমরা আশা করি, এই ব্লগ পোস্টটি আপনাকে টিএমএসএস লোন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে নিচে মন্তব্য করুন বা টিএমএসএস-এর স্থানীয় শাখায় যোগাযোগ করুন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই নিবন্ধে প্রদত্ত তথ্যগুলো সাধারণ তথ্যের জন্য এবং সর্বশেষ তথ্যের জন্য টিএমএসএস-এর অফিসিয়াল উৎস থেকে যাচাই করা উচিত।