পদক্ষেপ এনজিও (Podokkhep NGO) একটি বাংলাদেশভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, যার লক্ষ্য হলো সমাজের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধন। এটি মূলত ক্ষুদ্রঋণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন ও পরিবেশ উন্নয়নের মতো বিভিন্ন খাতে কাজ করে থাকে।

Table of Contents

পদক্ষেপ এনজিও সম্পর্কে বিস্তারিত:

🔹 প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস:

  • প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯৮৬ সাল
  • প্রতিষ্ঠাতা: মো. রেজাউল করিম (Rezaul Karim)
  • এটি শুরুতে ঢাকার একটি ক্ষুদ্র পরিসরে কার্যক্রম শুরু করে, পরে সারাদেশে বিস্তৃতি লাভ করে।

🔹 প্রধান কার্যালয়:

  • ঠিকানা: পদক্ষেপ ভবন, ১৬/৭, লেভেল ৩, সেগুনবাগিচা, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ

🔹 লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:

  • দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করা
  • নারীদের ক্ষমতায়ন ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা
  • শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান
  • টেকসই পরিবেশ উন্নয়ন ও সচেতনতা সৃষ্টি

🔹 মূল কার্যক্রমসমূহ:

  1. ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি (Microcredit Program):
    • দরিদ্র পরিবারকে স্বনির্ভর করতে ঋণ প্রদান
    • বিভিন্ন সঞ্চয় ও ঋণ পণ্য রয়েছে
  2. শিক্ষা ও শিশুকল্যাণ:
    • অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্র পরিচালনা
    • শিশুশ্রমে যুক্ত শিশুদের পুনর্বাসন
    • প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম
  3. স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা:
    • মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা
    • টিকাদান, পুষ্টি এবং প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা
  4. নারীর ক্ষমতায়ন:
    • আত্মকর্মসংস্থানের প্রশিক্ষণ
    • লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট ও আইনগত সহায়তা
  5. পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা:
    • বৃক্ষরোপণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
    • দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় সচেতনতা ও প্রস্তুতি কার্যক্রম

🔹 আন্তর্জাতিক অংশীদার ও স্বীকৃতি:

  • পদক্ষেপ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন UNDP, UNICEF, DFID, USAID, European Union, PKSF ইত্যাদির সাথে অংশীদারিত্বে কাজ করেছে।
  • এটি PKSF-এর অংশীদার সংস্থা হিসেবে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে।

🔹 ওয়েবসাইট ও যোগাযোগ:

পদক্ষেপ এনজিও লোন পদ্ধতি

এনজিও লোন বা সাধারণভাবে গ্রামীণ মাইক্রোক্রেডিট একটি বিশেষ ধরনের আর্থিক সহায়তা, যা সাধারণত নারী উদ্যোক্তা ও নিম্ন-আয়জীবীদের উপকারে কাজে লাগে। “পদক্ষেপ এনজিও লোন পদ্ধতি” মূলত এই লোন প্রক্রিয়ায় আবেদনের ধাপগুলো কীভাবে পরিচালিত হয় এবং প্রাপ্তির পথকে সহজ করে তোলে, সে বিষয়ে।

কেন পদক্ষেপ এনজিও লোন?

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক চাহিদা, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ঋণ প্রদান করতে “পদক্ষেপ এনজিও” একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই লোন পদ্ধতি:

  • সহজ ও স্বচ্ছ আবেদন প্রক্রিয়া
  • নারী ও সুযোগ-প্রাপ্ত শ্রেণির কাছে বিশেষ মনোযোগ
  • স্বল্প ন্যূনতম জামানত ও সুদ-হার
  • স্থিতিশীল ও গ্রাহক-বান্ধব সেবা

২. পদক্ষেপ এনজিও লোন পদ্ধতির মূল বিষয়গুলো

২.১ প্রাথমিক যোগ্যতা যাচাই

  • বয়স ও বাসস্থান: আবেদনকারীর বয়স সাধারণত ১৮–৬০ বছরের মধ্যে হওয়া প্রয়োজন, এবং সে পদক্ষেপের কার্যক্রম এলাকায় নিবাসী।
  • পেশা ও দক্ষতা: ক্ষুদ্র ব্যবসা, হস্তশিল্প, কৃষি,পশুপালন ইত্যাদি কোন ক্ষেত্রেই অর্জিত আয়–সংক্রান্ত প্রমাণ উপস্থাপন করতে হয়।
  • গ্রুপ ফর্মেশন: পদক্ষেপে ঋণ সাধারণত ‘গ্রুপ-লোন’ পদ্ধতিতে। সাধারণত ৫–১০ জন সমফলো সদস্য নিয়ে একটি গ্রুপ গঠন করা হয়।

২.২ আবেদনের ধাপ

  1. গ্রুপ আলোচনা ও সেলেকশন
  2. ডকুমেন্ট সংগ্রহ: ছবি, জাতীয় পরিচয় পত্র, ঠিকানা প্রমাণ
  3. প্রাক-কোয়ালিফিকেশন (প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং)
  4. শিক্ষণ ও ওরিয়েন্টেশন
  5. মূল্যায়ন ও লোন টার্ম নির্ধারণ
  6. চূড়ান্ত শুরুকরার জন্য চুক্তি স্বাক্ষর

২.৩ লোন পরিমান ও শর্তাদি

  • সর্বোচ্চ পরিমাণ: প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত ১০,০০০–৫০,০০০ টাকা (ক্লায়েন্ট প্রোফাইল, সম্ভাব্য আয়, ইত্যাদি বিচার করে)।
  • সুদ হার: সাধারণত ১২%–১৮%।
  • জামানত: গ্রুপ গ্যারান্টি প্রয়োগ করে, আলাদা জামাকাপড় বা জমি প্রয়োজন হয় না।
  • ঋণ সময়কাল: ৬–২৪ মাস, নির্দিষ্ট প্রকল্প ও প্রয়োজন অনুসারে।

৩. পদক্ষেপ এনজিও লোন পদ্ধতি বিস্তারিতসহ ধাপ অনুযায়ী বিশ্লেষণ

৩.১ গ্রুপ ফর্মেশন ও স্থানীয় সংগঠন

  • গ্রুপে ৫–১০ জন নারী বা উদ্যোক্তা মিলিত হন, যারা নিয়ে একটি স্থায়ী কাঠামো তৈরি করা হয়।
  • গ্রুপের মধ্যে নেতৃত্ব ও দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া হয় (গ্রুপ লিডার, সদস্য)।
  • স্থানীয় অফিসে বা এনজিও প্রতিনিধি দলের সাথে ফিজিক্যাল মিটিং হয় তথ্য ও সদস্য যাচাইয়ের জন্য।

৩.২ আবেদনপত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • আবেদন ফর্ম: এনজিও প্রদত্ত ফর্ম, যেখানে ব্যক্তিগত তথ্য, পরিবারের তথ্য, ব্যবসার ধরন ইত্যাদি উল্লেখ করতে হয়।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র: জাতীয় পরিচয়পত্র এর ফটোকপি।
  • ঠিকানাপত্র: ঘর ভাড়া বা চুক্তিপত্র, বা টিউশন প্রমাণ।
  • ব্যবসা পরিকল্পনা (Business Plan): যা তারা জমা দেয় তাদের ভবিষ্যত আইডিয়া ও বাজেট বিশ্লেষণ করে।

৩.৩ প্রশিক্ষণ ও ওরিয়েন্টেশন

  • এনজিও কর্তৃক আর্থিক সচেতনতা, হিসাব-নিকাশ, ব্যবসায় পরিচালনা ইত্যাদি বিষয়ে সেমিনার, ওরিয়েন্টেশন সেশন চালায়।
  • এটি গ্রাহকের সক্ষমতা বৃদ্ধিদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • এই ধাপে গ্রাহকদের মৌলিক আর্থিক লেখাপড়া শেখানো হয়, যাতে তারা ঋণ-নিয়ম মেনে কাজ করতে পারে।

৩.৪ মূল্যায়ন ও লোন টার্ম নির্ধারণ

  • কর্মজীবন, বাজার, বৈধতা, ঝুঁকি ইত্যাদি বিবেচনা করে লোন পরিমাণ নির্ধারিত হয়।
  • গ্রুপ গ্যারান্টির ভিত্তিতে সুদের হার ভাগ করা হয়।
  • আমানত কাঠামো, মাসিক কিস্তি, সময়কাল নির্দিষ্ট হয়।

৩.৫ চুক্তি স্বাক্ষর ও ঋণের জমাদান

  • গ্রাহক ও গ্রুপ লিডার লোন চুক্তিতে সই করেন।
  • তহবিল গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অথবা ক্যাশ আউট গ্রুপ মাধ্যমে হস্তান্তর হয়।
  • সূচনা– লোন পরীক্ষানিরীক্ষার অর্থ সরবরাহ শুরু হয়।

৪. কিস্তি পরিশোধ ও পর্যবেক্ষণ

  • নিয়মিত কিস্তি: গ্রাহক নির্ধারিত সময়ে (সাধারণত মাসে বা সপ্তাহে) নির্দিষ্ট কিস্তি প্রদান করে।
  • গ্রুপ-সভা: কিস্তি পরিশোধের সময়ে গ্রুপ সক্রিয় অংশ গঠন করে, সহযোগিতা করে।
  • ফিল্ড কর্মী যাচাই: এনজিও ফিল্ড অফিসার নিয়মিত গ্রাহকদের বাড়ি ও ব্যবসা পরিদর্শন করে অগ্রগতির খবর সংগ্রহ করে।
  • পুনঃশিক্ষা সেশন: লোনের মাঝামাঝি সময়ে আর্থিক দক্ষতা বৃদ্ধির ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম চালানো হয়।

৫. পরিশোধ সম্পন্ন ও পুনঃলোন সুযোগ

  • সফলভাবে সব কিস্তি পরিশোধ করলে গ্রাহক “চলতি ঋণ ফ্রি” স্ট্যাটাস পায়।
  • পুনঃঋণের জন্য আবেদন করলে পূর্ব অভিজ্ঞতা ও রেটিং ভিত্তিতে সুদ ও পরিমাণ নির্ধারণ করে তহবিল প্রদান করা হয়।
  • এটি উদ্যোক্তার বাজার প্রসারে সহায়তা করে।

৬. পদক্ষেপ এনজিও লোন পদ্ধতি এর সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা

✔️ সুবিধা

  • স্বল্প সুদ ও সহজ শর্তাদি
  • জামানত ছাড়া গ্রুপ গ্যারান্টি ভিত্তিক
  • নারীর ক্ষমতায়নে সহায়ক
  • লোকাল পর্যায়ে দ্রুত সেবা
  • সংগঠিত পর সাপোর্ট ও স্কিল ট্রেনিং

⚠️ সীমাবদ্ধতা

  • অনেকেই জমা ও হিসাব-নিগমনের দায়িত্বে উৎসাহ না পেতে পারে।
  • গ্রুপের সক্রিয়তা না থাকলে বিকাশ বাধাগ্রস্থ হতে পারে।
  • রিগুলার মার্কেট কমিশন ও সুদের সঙ্গে অনেক সময় মিলছে না।
  • বিনিয়োগ কেন্দ্রিক ব্যবসায়ে পরামর্শ বা সহায়তা কমতর হতে পারে।

৭. কীভাবে সফলভাবে “পদক্ষেপ এনজিও লোন” পাবেন 🚀

  1. ব্যবসার বাস্তব পরিকল্পনা তৈরি করুন
  2.  ডকুমেন্ট অ্যারেঞ্জ করুন
  3. আয়ের প্রমাণ সঠিক রাখুন
  4. প্রশিক্ষণে মনোযোগী হোন
  5. কিস্তির নিয়মিত হিসাব রাখুন
  6. গ্রুপ লিডার ও ফিল্ড কর্মীর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন

১০. উপসংহার

“পদক্ষেপ এনজিও লোন পদ্ধতি” মূলত একটি সুশৃঙ্খল, স্বচ্ছ ও করে তুলেছে গ্রামীণ অবস্থা ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা–চাকুরীর প্রয়োজন মেটানোর এক হাতিয়ার। আপনার যদি ক্ষুদ্র অথবা মাঝারি আকারের ব্যবসা বা উদ্যোক্তা কর্মকাণ্ড থাকে, তাহলে এই পদক্ষেপ আপনি উপেক্ষা করতে পারবেন না।

কীভাবে শুরু করবেন: আপনার নিকটস্থ পদক্ষেপ এনজিও ব্রাঞ্চে অফিসিয়ালভাবে যোগাযোগ করুন, আবেদনের জন্য প্রি-রেজিস্ট্রেশন ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট নিয়ে যান, আর প্রফেশন্যাল ওরিয়েন্টেশন সেশন সাপ্তাহিক / মাসিক অংশগ্রহণ করুন।

FAQ (Frequently Asked Questions)

Q: পদক্ষেপ এনজিও লোন কোথায় পাওয়া যায়?
A: আপনার জেলার নিকটস্থ পদক্ষেপ এনজিও ব্রাঞ্চ– অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করে আবেদন করতে পারেন।

Q: প্রথম লোন পেতে সাধারণত কত সময় লাগে?
A: আবেদন থেকে তহবিল পাওয়ার প্রক্রিয়া সফল ও উপযুক্ত হলে ২–৪ সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন হয়।

Q: জামানত চাইতে হয়?
A: আলাদা জামানত প্রয়োজন হয় না; গ্রুপ গ্যারান্টি ভিত্তিক ব্যবস্থা থাকে।

Q: ক্ষুদ্র ব্যবসা ছাড়া অন্য কোন কাজে লোন ব্যবহার করা যায়?
A: পদক্ষেপ প্রধানত আর্থিকভাবে সক্ষম ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীক কাজে লোন দিয়ে থাকে, কিন্তু কৃষি, হস্তশিল্প, সেবা ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করে।

Q: যদি কিস্তি দিতে পারি না?
A: বেশিরভাগ এনজিও “গ্রুপ সমঝোতা” এর মাধ্যমে চার্জ এবং সময় নির্ধারণ করে থাকে। ভয় পেয়ে না গিয়ে, গ্রুপ লিডার বা অ্যাসিস্ট্যান্টকে জানালে নিয়ম সহায়তা পাওয়া যায়।

অন্যান্য পোস্টগুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *